পাসওয়ার্ড ম্যানেজার ও অথেন্টিকেটর: ডিজিটাল নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী

আজকের ডিজিটাল যুগে নিরাপত্তা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। আমাদের ব্যক্তিগত তথ্য, ব্যাংকিং ডেটা, সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টসহ প্রতিটি জায়গায় সুরক্ষার প্রয়োজন। কিন্তু বিভিন্ন অ্যাকাউন্টের জন্য শক্তিশালী ও ভিন্ন পাসওয়ার্ড মনে রাখা কঠিন। এই সমস্যার সমাধান করে পাসওয়ার্ড ম্যানেজার। এর সাথে অথেন্টিকেটর ব্যবহার করে আপনি আপনার অ্যাকাউন্টগুলোকে আরও নিরাপদ করতে পারেন।

পাসওয়ার্ড ম্যানেজার কী?

পাসওয়ার্ড ম্যানেজার এমন একটি টুল যা আপনার সব পাসওয়ার্ড একটি নিরাপদ ভল্টে সংরক্ষণ করে এবং বিভিন্ন সাইটে লগইন করার সময় সেগুলো অটোমেটিক পূরণ করে। এটি জটিল ও শক্তিশালী পাসওয়ার্ড তৈরি করতে পারে, যা হ্যাকিংয়ের ঝুঁকি কমায়। পাসওয়ার্ড ম্যানেজারের প্রধান সুবিধা হল, আপনাকে শুধু একটি মাস্টার পাসওয়ার্ড মনে রাখতে হবে, বাকি সবকিছু এটি নিজেই ম্যানেজ করবে।

অথেন্টিকেটর কী?

অথেন্টিকেটর হল এমন একটি টুল যা আপনার অ্যাকাউন্টে লগইন করার সময় অতিরিক্ত নিরাপত্তা স্তর যোগ করে। এটি লগইনের সময় স্বয়ংক্রিয়ভাবে অস্থায়ী OTP কোড জেনারেট করে যাচাই করে। ফলে, কেউ আপনার পাসওয়ার্ড জেনে গেলেও, অথেন্টিকেটর কোড ছাড়া তারা আপনার অ্যাকাউন্টে ঢুকতে পারবে না। অথেন্টিকেটর হিসেবে SMS ব্যবহার করা যায়, তবে কেন SMS-ভিত্তিক টু-স্টেপ ভেরিফিকেশন ব্যবহার করা উচিত নয় তা জানতে এই লিংকে ক্লিক করুন।

কেন পাসওয়ার্ড ম্যানেজার ও অথেন্টিকেটর ব্যবহার করবেন?

একাধিক সাইটে একই পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা ঝুঁকিপূর্ণ। একটি সাইটের ডেটা ফাঁস হলে, হ্যাকাররা আপনার অন্য অ্যাকাউন্টেও ঢুকতে পারে। তাই পাসওয়ার্ড ম্যানেজার থেকে প্রতিটি অ্যাকাউন্টে আলাদা ও জটিল পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা উচিত। যেহেতু অনেক জটিল পাসওয়ার্ড মনে রাখা কঠিন, তাই সেগুলো সংরক্ষণের জন্য পাসওয়ার্ড ম্যানেজার ব্যবহার করতে হবে। এতে হ্যাকিংয়ের ঝুঁকি অনেক কমে যাবে। আর অথেন্টিকেটর ব্যবহারে অতিরিক্ত সুরক্ষা পাওয়া যায়, যা পাসওয়ার্ড চুরি হলেও অ্যাকাউন্ট রক্ষা করতে সাহায্য করে।

সেরা পাসওয়ার্ড ম্যানেজার

বর্তমানে অনেক জনপ্রিয় পাসওয়ার্ড ম্যানেজার আছে। তবে সেরা পাসওয়ার্ড ম্যানেজার হিসেবে Bitwarden অন্যতম।

Bitwarden

Bitwarden হল ওপেন সোর্স ও প্রিমিয়াম মানের পাসওয়ার্ড ম্যানেজার, যা ফ্রি ও প্রিমিয়াম উভয় ধরনের ব্যবহারকারীদের জন্য পাওয়া যায়। এটি ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক উভয় ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত। প্রিমিয়াম সংস্করণে টু-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন, এনক্রিপ্টেড স্টোরেজসহ আরও উন্নত নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য রয়েছে।

সুবিধা:

  • ওপেন সোর্স প্রডাক্ট
  • ফ্রি ভার্সনেই অনেক ফিচার
  • প্রিমিয়াম সংস্করণে আরও উন্নত ফিচার

অসুবিধা:

  • অথেন্টিকেটর ফিচারের জন্য পে করে প্রিমিয়াম নিতে হয়

Vaultwarden

যারা Bitwarden-এর প্রিমিয়াম ফিচার ব্যবহার করতে চান কিন্তু খরচ বাঁচাতে চান, তাদের জন্য Vaultwarden একটি ভালো বিকল্প। এটি একটি হালকা ও সেলফ-হোস্টেড পাসওয়ার্ড ম্যানেজার। এটি মূলত Bitwarden-এর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ সার্ভার।

সুবিধা:

  • নিজেই হোস্ট করার সুযোগ
  • Bitwarden-এর প্রায় সব ফ্রি ও প্রিমিয়াম ফিচার ফ্রিতে ব্যবহার করা যায়

অসুবিধা:

  • নিজে হোস্ট করার জন্য প্রযুক্তিগত দক্ষতা ও সার্ভার লাগে। তবে আপনি চাইলে Vaultwarden-এর অফিসিয়াল পাবলিক ইনস্ট্যান্স ব্যবহার করতে পারেন।

Vaultwarden-এর পাবলিক ইনস্ট্যান্স

যারা নিজে হোস্ট করতে চান না, তারা Vaultwarden-এর পাবলিক ইনস্ট্যান্স vault.vaultwarden.net বা vault.vaultwarden.uk ব্যবহার করতে পারেন। এটি একটি ফ্রি ও নিরাপদ সমাধান, যা Bitwarden-এর প্রায় সব ফ্রি ও প্রিমিয়াম ফিচার ব্যবহারের সুবিধা দেয়। বিশেষ করে অথেন্টিকেটর ফিচারটি এখানে বিনামূল্যে ব্যবহার করা যায়। ফলে একটি সেবা থেকেই আমরা পাসওয়ার্ড ম্যানেজার ও অথেন্টিকেটরের সেরা সুবিধা পেতে পারি।

Keyguard: Vaultwarden-এর জন্য পার্ফেক্ট ক্লায়েন্ট

Keyguard হল Bitwarden-এর জন্য একটি থার্ডপার্টি ক্লায়েন্ট, যা সেরা ব্যবহারকারী অভিজ্ঞতা দেওয়ার লক্ষ্যে তৈরি করা হয়েছে।

Keyguard-এর বৈশিষ্ট্য:

  • সুন্দর Material You ইন্টারফেস
  • দ্রুত ও শক্তিশালী সার্চ সুবিধা
  • Passkeys দিয়ে আধুনিক পাসওয়ার্ডবিহীন অথেন্টিফিকেশন
  • Watchtower: ঝুঁকিপূর্ণ অ্যাকাউন্ট, কম্প্রোমাইজড পাসওয়ার্ড, ও পুনঃব্যবহৃত পাসওয়ার্ড শনাক্তকরণ
  • একাধিক অ্যাকাউন্ট ও দুই-ধাপ যাচাইকরণ সমর্থন
  • অফলাইনে ভল্ট অ্যাক্সেস ও ব্যবহারের সুবিধা
  • মোবাইলে ব্যবহারের জন্য বেশি উপকারী

আমি যেভাবে ব্যবহার করি

আমি সার্ভার হিসেবে Vaultwarden ব্যবহার করি, আর ইনস্ট্যান্স হিসেবে vault.vaultwarden.net ব্যবহার করি। যেহেতু Vaultwarden সব ধরনের Bitwarden ক্লায়েন্টে ব্যবহার করা যায়, তাই ডেস্কটপে Bitwarden-এর অফিসিয়াল ব্রাউজার এক্সটেনশন ও Vaultwarden-এর ওয়েব ক্লায়েন্ট ব্যবহার করি। মোবাইলে আমি Keyguard ব্যবহার করি, কারণ এটি একটি আকর্ষণীয় ও অসাধারণ ক্লায়েন্ট।

উপসংহার

পাসওয়ার্ড ম্যানেজার ও অথেন্টিকেটর আমাদের ডিজিটাল নিরাপত্তার অপরিহার্য অংশ। তাই এগুলো ব্যবহার করা জরুরি। সবশেষে, Bitwarden ও Vaultwarden-এর মধ্যে, সব দিক বিবেচনায় Vaultwarden-এর পাবলিক ইনস্ট্যান্স ব্যবহারই সর্বোত্তম সমাধান। কারণ এতে অতিরিক্ত খরচ নেই এবং প্রায় সব ফিচারই রয়েছে।

9 Likes

বাহ, দারুণ লিখেছেন। অনেকেরই উপকারে আসবে।

1 Like

আমি পাসওয়ার্ড ম্যানেজার হিসেবে Proton Password ব্যবহার করি এর এনক্রিপশন ফিচারের জন্য। এইটাতে ফ্রী ভার্সনেই Authentication ফিচার রয়েছে। তবে আমি 2FA Authentication এর জন্য Ente Auth ব্যবহার করি এর মূলত Decoupling এবং এর দারুন UI এর জন্য। এর ডেস্কটপ ভার্সন ও রয়েছে।

5 Likes

Proton Pass এর ইউআই বেস্ট। তবে সম্ভবত এটায় অথেন্টিকেশন দেয় মাত্র তিনটা তাই মনমত হয়নি। আর আগে bitwarden এর সাথে ente auth ব্যবহার করতাম তবে দুটো আলাদা টুলস ব্যবহার করা থেকে একটায় দুটো পাওয়া যায় এমন হলে ভালো হয় সেই জন্য vaultwarden এ ব্যবহার শুরু করেছি পরিপূর্ণভাবে।

2 Likes

আমি Pass Plus (Proton Unlimited) প্ল্যান ব্যবহার করছি। Proton এর সব প্রোডাক্টই ভালো + সিকিউর।

1 Like

জ্বী। কিন্ত একটু বেশি নিরাপত্তা চাইলে আলাদা আলাদা টুল ব্যবহার করা উচিৎ। এতে কিছুটা বেশি নিরাপদ থাকা যায়।

2 Likes

আমি আমার সব সোস্যাল আইডিতে ইমেলে হিসেবে প্রোটন মেইল অ্যাড করে রেখেছি।

1 Like

আমিও Bitwarden ব্যবহার করি। একাধিক ডিভাইসে ব্যবহার করা যায় আর ফ্রি। এজন্য এটাই ভালো লাগে।

2 Likes

লং টাইম keepassxc ইউজার। ক্লিক করে বা শর্টকাট দিয়ে অটোটাইপিং টা হাতের জন্য উপকারী
এছাড়া TOTP ইন্টিগ্রেটেড

মাল্টি ডিভাইস সিংক একটা সমস্যা। ড্রপবক্সের বা iCloud দিয়ে সেটাও মোটামুটি সলভ করেছি

1 Like

চমৎকার পোস্ট। এরকম একটা এপ ব্যবহার করা দরকার। জাজাকাল্লাহ।

1 Like

Excellent post. Very Helpful.

1 Like

পিসিতে Ente auth ইউজ করি। মোবাইলে authy.
এছাড়া বিটওয়ার্ডেনে 2fa সেটআপ কোডটা সেভ করে রাখা যায়, এটা এদের আপ থেকে না ইউজ করলেও পরে চাইলে অন্য কোথাও ইউজ করা যাবে।

1 Like