অ্যাটিটিউড ডিসঅর্ডার

যখন আপনি কাজের প্রতি অন্যদের চেয়ে অধিক মনোযোগী ও দায়িত্বশীল হয়ে ওঠেন, তখন সমাজের অদৃশ্য একটি নিয়ম আপনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে। এটা যেন এক অলিখিত চুক্তি— “সবাই গড়পড়তা থাকবে, কেউ খুব বেশি উঁচুতে উঠবে না।” এই চুক্তি ভঙ্গ করলেই আপনি সমাজের চোখে সন্দেহভাজন। আপনার অতিরিক্ত সিরিয়াসনেস স্বাভাবিকভাবে অন্যদের আরামদায়ক স্থবিরতাকে চ্যালেঞ্জ করে বসে।

মানুষের সহজাত বৈশিষ্ট্য হলো, তারা গড়পড়তার সমানুপাতিক বৃত্তে স্বস্তি বোধ করে। এই বৃত্তের মধ্যে সবাই নিরাপদ; কেউ কারও চেয়ে খুব বেশি এগিয়ে নেই, আবার কেউ পিছিয়েও নেই। কিন্তু আপনি যখন এই বৃত্তের বাইরে বেরিয়ে আসতে চান, অগ্রগতির পথে আরও একটু দৌড়াতে চান, তখন অন্যরা কেবল বিরক্ত হয় না, আপনার অস্তিত্বকে হুমকি হিসেবেও দেখতে শুরু করে।

একজন কৃষক যখন তার ফসলের যত্নে অন্যদের চেয়ে বেশি শ্রম দেয়, তখন প্রতিবেশীরা বলাবলি করে, “এই লোকটা এত কাজ করছে কেন? ওর তো কোনো উদ্দেশ্য আছে।” বাস্তবিক অর্থে, আপনি যখন ভালো কিছু করতে চান, তখনই আপনাকে সন্দেহের চোখে দেখা হয়। আপনার সাফল্য যেন অন্যদের অলসতার আড়াল সরিয়ে ফেলে। আপনি তাদের আয়নায় মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেন—যেখানে তারা তাদের নিজস্ব অনাগ্রহ আর অক্ষমতাগুলো স্পষ্ট দেখতে পায়। যে প্রতিবিম্ব তারা মন থেকে মেনে নিতে পারে না। দারুণ একটি অস্বস্তিতে ভুগতে থাকেন তারা।

এমন অবস্থায়, এটিকে ‘অ্যাটিটিউড ডিসঅর্ডার’ বলা যেতে পারে। আসলে এটি কোনো রোগ নয়, বরং এটি আপনার ব্যতিক্রমী অবস্থানকে সাধারণ দৃষ্টিকোণে নামিয়ে আনার একটি প্রচেষ্টা। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়াও বটে। এতে সমাজের জন্য দুটি সুবিধা হয়: প্রথমত, আপনাকে অগ্রগতির পথে মন্থর করা যায়, এবং দ্বিতীয়ত, নিজেদের অলসতা লুকানো যায়।

তবে এই নাটকীয় প্রতিক্রিয়া একটি গভীর দর্শনকে স্পষ্ট করে। এটি দেখায়, মানুষ প্রাকৃতিকভাবেই পরিবর্তনকে ভয় পায়। তারা এমন এক সান্ত্বনা চায় যা স্থবিরতা থেকে আসে, যদিও সেই স্থবিরতা তাদের জীবনের সার্বিক উন্নয়নের পথে অন্তরায়। যে ব্যক্তি এই সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করতে চায়, তাকে বারবার সিলেবাসের বাহিরে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা চালানো হয়। এটাই সভ্যতার চিরন্তন ট্র্যাজেডি।

আপনার অগ্রগতি যদি অন্যদের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করে, তবে তা মেনে নেওয়াই শ্রেয়। আপনাকে বুঝতে হবে, কিছু মানুষ আপনার অগ্রগতিকে অনুপ্রেরণা হিসেবে নেবে, আর বাকিরা তা দেখবে হুমকি হিসেবে। আপনি কি একটি মূর্তির মতো স্থির হয়ে থাকবেন, নাকি একটি নদীর মতো অবিরাম প্রবাহিত হবেন? আপনি যদি নদী হতে চান, তবে আপনাকে অন্যদের স্থবিরতা ভেঙে এগিয়ে যেতে হবে।

সত্যিকারের উন্নতি একাকীত্ব দাবি করে। এটি একটি যুদ্ধ, যেখানে প্রতিপক্ষ আপনার চারপাশের মানুষ নয়, বরং তাদের মধ্যে থাকা সেই ভয়, যে ভয় পরিবর্তনের, সেই ভয় উন্নতির। তাই অগ্রগতির পথে নেমে নিজেকে প্রশ্ন করুন: “আমি কি মানুষের স্বস্তি নষ্ট করছি, নাকি নিজের ভবিষ্যৎ নির্মাণ করছি?” উত্তরে যদি নিজের স্বপ্নের প্রতিধ্বনি শুনতে পান, তবে সেই দূরত্ব মেনে নিয়ে সামনে এগিয়ে যান।

:writing_hand:
মোস্তাফিজুর রহমান শামীম

7 Likes