আমাদের অনেকেরই কখনো না কখনো ব্রাউজারের ক্যাশ (Cache) নিয়ে মনে প্রশ্ন এসেছে। এই জিনিসটি কী, কেন প্রয়োজন? আবার নির্দিষ্ট সময় পর পর ক্যাশ পরিষ্কার না করলেই বা কী ক্ষতি, এমন অনেক প্রশ্নই আমাদের মনে ঘুরপাক খায়।
আমরা যেসব ওয়েবসাইট ব্রাউজ করি, সে সব ওয়েবসাইটের তথ্য যেখানে সংরক্ষিত থাকে, সেটাকেই ক্যাশ বা ক্যাশ মেমরি বলে। এসব তথ্য সংরক্ষণ করা হলে পরবর্তীতে আমাদের পছন্দের ওয়েবসাইটগুলোতে দ্রুততম সময়ে প্রবেশ করা যায়। যদিও দীর্ঘদিন ধরে ক্যাশ পরিষ্কার না করলেও অনেক সময় সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ব্রাউজার ক্যাশ কী
আমাদের ব্রাউজ করা ওয়েবসাইটগুলোর বিভিন্ন তথ্য সংরক্ষণের জন্য যে স্টোরেজ স্পেস আছে, সোজা কথায় সেটাই হচ্ছে ক্যাশ। সব ব্রাউজারেই ক্যাশ থাকে।
ক্যাশ যেভাবে কাজ করে
আমরা যখন আমাদের কম্পিউটার, ট্যাব বা মোবাইলের কোনো ব্রাউজারের মাধ্যমে কোনো ওয়েবসাইটে প্রবেশ করি, ব্রাউজার তখন সেই ওয়েবসাইটের টেক্সট, ছবি, অডিও, ভিডিও ইত্যাদি তথ্য ক্যাশে সংরক্ষণ করে রাখে। ফলে একই ওয়েবসাইটে যখন আমরা পুনরায় প্রবেশ করতে যাই, তখন আরও দ্রুত প্রবেশ করতে পারি।
সাইবার সিকিউরিটি ফার্ম ট্রাস্টেডসেক এর অ্যাডভাইজরি সলিউশন ডিরেক্টর অ্যালেক্স হ্যামারস্টোন বলেন, ‘দ্রুতগতির ইন্টারনেট আসার আগে ক্যাশ মানুষের অনেক সময় বাঁচাত। বিশেষ করে অনেক ছবি আছে, এমন ওয়েবসাইটে পুনরায় প্রবেশের ক্ষেত্রে অনেক সময় বাঁচানো যেত এই প্রযুক্তি থাকার ফলে। এমনকি উচ্চ গতির ইন্টারনেটের এই সময়েও ক্যাশের কারণে আমরা অনেক দ্রুত ওয়েব ব্রাউজ করতে পারি।’
ক্যাশ আর কুকিজের পার্থক্য
ক্যাশ আর কুকিজ বিভিন্ন সময় একই সঙ্গে ব্যবহৃত হলেও দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন জিনিস। ক্যাশ হচ্ছে ওয়েবসাইট সম্পর্কিত, আর কুকিজ হচ্ছে ব্যবহারকারী সম্পর্কিত বিষয়।
কম্পিউটার এবং নেটওয়ার্ক সিকিউরিটি কোম্পানি ফায়ারটেইল এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জেরেমি স্নাইডার বলেন, ‘আপনি যে ওয়েবসাইটটি ব্রাউজ করছেন, সেই ওয়েবসাইট সম্পর্কিত তথ্য ক্যাশে জমা থাকে। আর আপনার পরিচয়, পছন্দ-অপছন্দ, লগ-ইন তথ্য ইত্যাদি নানারকম তথ্য কুকিজে সংরক্ষিত থাকে।’
কুকিজের সাহায্যে কোনো ওয়েবসাইট ব্যবহারকারীর লগইন তথ্য সংরক্ষণ করে রাখে। ফলে পরবর্তীতে ওই ওয়েবসাইটে প্রবেশ করার সময় বারবার লগইন সম্পর্কিত তথ্য দিতে হয় না। এখানে ক্ষতির দিকটি হচ্ছে, কুকিজের সাহায্যে একজন ব্যবহারকারীকে ট্র্যাক করা যায়। তিনি কী দেখছেন, কোন কোন ওয়েবসাইট ব্রাউজ করছেন, কোন ধরনের কনটেন্ট পছন্দ করছেন, কোনগুলো অপছন্দ করছেন- এ ধরনের নানা তথ্য সংগ্রহ করা যায়, যা ব্যবহারকারীকে টার্গেট করে বিভিন্ন বিজ্ঞাপন দেওয়ার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
হ্যামারস্টোন বলেন, ‘আপনি যখন ইন্টারনেট ব্রাউজ করেন, তখন আসলে অনেক কিছু হয়। কুকিজে আপনার সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য জমা হতে থাকে। ধরুন, আপনি কিছু একটা সার্চ করলেন। দেখবেন কিছুক্ষণ পর ভিন্ন আরেকটি ওয়েবসাইটে ওই জিনিসটি সম্পর্কিত বিভিন্ন বিজ্ঞাপন দেখতে থাকবেন। এটা মূলত কুকিজের কাজ।’
কেন ক্যাশ পরিষ্কার করা উচিত
ক্যাশ ওয়েবসাইট ব্রাউজিংকে দ্রুততর করলেও এর নানা ক্ষতিকর দিকও আছে। অনেক ক্যাশ জমে গেলে ডিভাইস ধীরগতির হয়ে যেতে পারে। আমরা ইন্টারনেট যত বেশি ব্রাউজ করি, তত বেশি ক্যাশ জমা হয়। ক্যাশ জমা হয় মূলত আমাদের ডিভাইসের স্টোরেজেই। ফলে ডিভাইস ও ব্রাউজার উভয়ই ধীরগতির হয়ে যেতে পারে।
দীর্ঘদিন ক্যাশ পরিষ্কার না করলে অনলাইন স্ক্যামাররাও আপনাকে সহজে ট্র্যাক করতে পারে। ফলে আপনার অনলাইন নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। কোনো ওয়েবপেজ যদি লোড হতে অনেক দেরি হয়, তাহলে বুঝতে হবে ক্যাশ পরিষ্কার করতে হবে।
ক্যাশ পরিষ্কার করলে অনলাইন স্ক্যামারদের হাত থেকে মুক্ত থাকা যায়, তবে এর ফলে পছন্দের ওয়েবসাইটগুলোতে প্রবেশে বাড়তি সময়ও লাগতে পারে।
আপনি যখন ক্যাশ পরিষ্কার করবেন, তখন আপনার ব্রাউজকৃত সব ওয়েবসাইটের সংরক্ষিত সব তথ্য (টেক্সট, ছবি, অডিও, ভিডিও) মুছে যাবে। ফলে ডিভাইসের স্টোরেজ অনেকটা ফাঁকা হবে, ডিভাইস এবং ব্রাউজার দ্রুতগতির হবে।
কত দিন পর পর ক্যাশ পরিষ্কার করা উচিত
এর নির্দিষ্ট কোনো নিয়ম নেই। বিশেষজ্ঞরা বলেন, এটা ব্যক্তিগত ইচ্ছার উপর নির্ভর করে। হ্যামারস্টোন মনে করেন, ওয়েবসাইট ব্রাউজিংয়ের ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দিলে ক্যাশ পরিষ্কার করা উচিত। স্নাইডার মনে করেন, এই কাজটিকে ‘নিয়মিত ডিভাইস রক্ষণাবেক্ষণ কাজের’ অংশ হিসেবে বিবেচনা করা উচিত। একাধিক মানুষ একটি ডিভাইস ব্যবহার করেন, এমন ক্ষেত্রে প্রতিদিনই ক্যাশ পরিষ্কার করা উচিত। আর ব্যক্তিগত ডিভাইসের ক্ষেত্রে মাসে অন্তত একবার ক্যাশ পরিষ্কার করা উচিত বলে মনে করেন স্নাইডার।