একেবারে শুন্য থেকে সেলস পেইজ লিখতে আপনাকে যা করতে হবে - উদাহরণ সহ

গত সপ্তাহে একজন ক্লায়েন্টের হয়ে একটা সেলস পেজ লিখতে বসেছিলাম। সমস্যা হল, ক্লায়েন্টের ওয়েবসাইট টা পুরোটাই ফাঁকা।

অর্থাৎ ওয়েবসাইটের সব কনটেন্ট আমাকে দিতে হবে। ওয়েবসাইটটিতে লরেম ইপসাম অর্থাৎ ডিফল্ট পেজ করা আছে। সাজানোর দায়িত্ব আমার। প্রথম সেলস পেজটি হবে সাইবার সিকিউরিটি নিয়ে।

তো যে কথা সেই কাজ। লেগে গেলাম সাইবার সিকিউরিটি নিয়ে রিসার্চ করতে। মার্কেটে অনেক সাইবার সিকিউরিটি প্রোভাইডিং ফার্ম আছে যারা একটা সফটওয়্যার আপনাকে ইন্সটল করে দেবে।

আপনি আপনার সফটওয়্যার দিয়ে আপনার সিস্টেম মনিটর করতে পারবেন। ওরা সেই সফটওয়্যার আপডেট করবে আর আপনি কোন সমস্যায় পড়লে সেটা সলভ করবে।

আপনি কত ঝুঁকিতে আছেন সেটাও সফটওয়্যার নির্ধারণ করবে এবং সে অনুযায়ী কর্মপন্থাও তারা দেবে।

এটা ভেবেই মনে করেছিলাম সেলস পেজটা লিখে দেব। অর্থাৎ এরপরে কোথায় কোন এলিমেন্ট যাবে, সেটা সাজিয়ে দেব। এরপর লিখব। সোজা কাজ। এটলিস্ট তাই হওয়ার কথা ছিল।

আমার একটা বাজে অভ্যাস হচ্ছে ক্লায়েন্টের সাথে প্রত্যেকটা আর্টিকেল লেখার আগে ছোট্ট কথা সেরে নেয়া।

ক্লায়েন্টের সাথে কথা বলতে গিয়ে বুঝতে পারি তারা সনাতনী পদ্ধতিতে সাইবার সিকিউরিটি দেবেন।

এরপরে ক্লায়েন্ট বললেন, তুমি একটা কিছু লিখে দাও। আমরা ডেভলপার, আমরা সনাতনী পদ্ধতিতে সার্ভিস দেব এবং সিকিউরিটি নিশ্চিত করব। সেই ম্যানপাওয়ার আমাদের আছে।

অনেক প্রশ্ন করে খুঁটিনাটি জানতে চাইলাম। তারপরে উনাদের কম্পিটেটর সম্পর্কে একটা ধারণা আসলো।

আমার প্রশ্ন ছিল ক্লায়েন্ট কেমন বাজেট করতে পারে আপনাদের সার্ভিস নেয়ার জন্য? উনারা একটু উপরের বাজেটের ক্লায়েন্টকে সার্ভিস দেন।

উনাদের টিম ফিজিকালি সেই লোকেশনে যায়।

এরপরে উনারা জায়গাটা মনিটর করেন। এখানকার প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নিয়ে যান এবং লাগিয়ে দেন। তারপর সেটাকে অনলাইন করা হয়।

আমি যতগুলো সাইবার সিকিউরিটি প্লাটফর্ম দেখেছি সেটা অ্যাপ নির্ভর বা সফটওয়্যার নির্ভর।

তাই প্রত্যেকটা প্যারামিটার ধরে ধরে রিসার্চ করতে লাগলাম। রিসার্চের ধরনটা ছিল এরকম:

একটা ফার্ম কিভাবে সফটওয়্যার ছাড়া অন্য আরেকটা ডিজিটাল ফার্মের সিকিউরিটির দুর্বলতা গুলো খুঁজে বের করতে পারে? সেখানে কি লোকেশন ভিসিট করার দরকার আছে?

কি ধরনের যন্ত্রপাতি লাগবে? সেগুলো ঠিকঠাক বসিয়ে দিয়ে চালু করবার খরচ টা কতটুকু? সেখানে কি একজন ইঞ্জিনিয়ার এর প্রয়োজন পড়বে? এই ধাপে যেই ফার্মটির সিকিউরিটি নিশ্চিত করা হচ্ছে, সেখানকার কর্মীদের এই সংক্রান্ত কোনো সেশন নিতে হবে কিনা?

পুরো জিনিসটার জন্য একজন ডেভলপার এবং সর্বোপরি সাইবার সিকিউরিটি ফার্মটির কতটুকু অভিজ্ঞতার প্রয়োজন?

যেই ফার্মটি এই সুবিধা দিচ্ছে, তারা কি অভিজ্ঞ? তারা এর সাথে সাথে অন্য কি কি সুবিধা দিচ্ছে যেন তাদের এই সার্ভিসটি দেয়া সহজ হয়?

তাদের অন্য সার্ভিস গুলোর সাথে এই সার্ভিসটা কিভাবে রিলেট করে? তারা কি আলাদাভাবে সাইবার সিকিউরিটির এই ধরনের যন্ত্র গুলো বিক্রি করে? এটা সার্ভিসের অংশ? তাদের সাথে অন্য কোম্পানিগুলোর এই ধরনের সার্ভিসের পার্থক্যটা কোথায়?

এই প্রশ্নগুলো ইন্টারনাল লিংকিনে কাজে দেয়।

আচ্ছা, এই ধরনের একটি সেট আপ চালানোর জন্য সেই কোম্পানিটি যথেষ্ট হবে নাকি সাইবার সিকিউরিটি ফার্মটি তাকে সাহায্য করবে?

আমরা গেমার হিসেবে জানি বিভিন্ন গেমে প্যাচ আর সিকিউরিটি আপডেট দেয়া হয়। এই সাইবার সিকিউরিটি ফার্মটি হার্ডওয়ার আর সফটওয়্যার আপডেট কিভাবে দেবে?

সেটার খরচ কেমন? আর অ্যাপ নির্ভর এই জমানায় কেন এরকম নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিতে হবে? এগুলো কারা নেয়? আদৌ কি এই ফার্মটির কোন ক্লায়েন্ট আছে?

এই প্রশ্নগুলো করে, প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা search result পেয়েছি। এর মধ্যে কিছু কমন ছিল। এরপরে সেগুলোকে সাজিয়ে তাদের কনটেন্ট অ্যানালিসিস করেছি।

তাদের কাছ থেকে পাওয়া গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্যের ভিত্তিতে হিরো সেকশন থেকে শুরু করে প্রত্যেকটি এলিমেন্ট নিজে সাজিয়েছি।

এমনকি, এই ধরনের অর্গানাইজেশনের কাছে একটা প্রসপেক্টিভ ক্লায়েন্টের কি কি প্রশ্ন থাকতে পারে সেগুলোর বিশদ উত্তর জেনে নিয়েছি। এই ক্ষেত্রে ক্লায়েন্ট সময় দিতে পারেননি। তাই নিজের ছোট ভাইয়ের কাছে আধা ঘন্টা সময় নিয়েছিলাম।

ও নিজেই সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার।

এরপর যথারীতি নিজের মতন করে একটা সেলস পেজ দাঁড় করিয়েছি এবং ১২০০ শব্দের মধ্যে সেটা শেষ করার চেষ্টা করেছি। পুরো বিষয়টা শেষ করতে আমার তিন দিন লেগেছে।

বলাবাহুল্য, লেখার সময় সিমান্টিক এসিও এবং সত্যিকারের তথ্য, তথা ভাষাগত বৈচিত্র্যের দিকে খেয়াল রেখেছিলাম।

প্রত্যেকটি ভাগে কত শব্দ দিয়েছি এটা আর বললাম না। একেক জন একেক রকম করে দিতে পারেন।

এই ধরনের পেজগুলোতে যেখানে তথ্য খোঁজা একটু সতর্কতার সাথে করতে হবে এবং খুব একটা তথ্য পাওয়া যাবে না, সেখানে নিজের বুদ্ধিশুদ্ধি আর অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে হবে। আমি বলছি না আমার অভিজ্ঞতা খুব বেশি বা আমি খুব বেশি বুদ্ধিমান।

বরং, আমি বলতে চাইছি, আন পপুলার বিষয়গুলোতে লেখার অভ্যাস থাকলে এবং তথ্য খুঁজে পাওয়ার অভ্যাস থাকলে, পপুলার বিষয়গুলোতে লেখা সহজ হয়ে যায়।

7 Likes

আপনার সাথে কথা বললেই বুঝা যায় ভাই আপনি অনেক রিসার্চ করে তারপর কাজ করেন। ক্লায়েন্টের ইস্যুর কারণে লাস্ট প্রোজেক্টটা আপনার সাথে করা হয় নাই। নিকট ভবিষ্যতে আপনার সাথে কাজ করার ইচ্ছা আছে যদি আল্লাহ কবুল করনে।

আরাফাত ভাই, এখন লিখি কম। টিম লেখে, এটা এক্সেপশন ছিলো। টিমকে রিসার্চ করে দিলেও বিষয়টা ওরা বুঝতো না। :slight_smile: এই কারণে নিজেই লিখতে হয়েছে।

1 Like