যারা মানুষের জন্য ফ্রিতে বড় বড় টিউটোরিয়াল বানায়, বা বিভিন্ন কোর্স বানায়, তারা নিঃসন্দেহে কমিউনিটির জন্য অনেক কিছুই করে। কিন্তু মাঝে মাঝেই প্রশ্ন আসে আসলে তাদের কি লাভ এইসব কাজ করে। বাস্তব দিক বিবেচনায় আসলে তাদের লাভ নাই। যারা মন থেকে টিউটোরিয়াল বানায়, তারা মূলত লাভ লস বিবেচনায় টিউটোরিয়াল বানায় না।
বাইরের দেশে টিউটোরিয়াল বানানো, কোর্স বানানো, এইসব দিকগুলা অনেক সহজভাবেই নেয়া হয়। ফ্রিতে শেখানো, পেইড শেখানো; এগুলো নিয়ে এত বেশি হাহাকার হয় না, যেটা আমাদের দেশে হয়ে থাকে। এমনও কোর্স রয়েছে যেগুলো হয়তো ৯৯৯ ডলার চার্জ করে থাকে যার কনটেন্ট আমাদের দেশে হয়তো ফ্রিতেই অনেকে প্রভাইড করে, বা করবে বলে মানুষ আশা করে থাকে।
দেখা যায় একটা পর্যায়ে গিয়ে যারা কনটেন্ট তৈরি করে, তাদের অনেকেই আশাহত হয়ে পড়ে এবং মোটিভেশন হারিয়ে কনটেন্ট তৈরি করা অফ করে দেয়। এরপর নিজের লাইফ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। মানুষ তখন তাদেরকে কনটেন্ট বানাতে বললেও তারা আর বানায় না, কারণ কনটেন্ট বানিয়ে গালি খাওয়ার ইচ্ছা হয়তো তাদের থাকে না।
মানুষকে বিনামূল্যে বা টাকার বিনিময়েও টিউটোরিয়াল তৈরি করে শেখানোর অনেক সুবিধা রয়েছে। এগুলো মাথায় থাকলে কন্ট্রিবিউশন করা অনেক সহজ হয়।
নিজের জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধিঃ আমি যা নিজে ভাল পারবো তাই অন্যকে শেখাতে পারব। নিজে না পারলে অন্যকে শেখাতে পারব না। কোন কিছু অন্যকে শেখাতে গেলে যে পরিমান পড়াশোনা করা লাগে, এতে নিজের স্কিল বাড়ে। শুধু এই একটা কারণেই অন্যকে শেখানো চালিয়ে যাওয়া উচিৎ।
ব্রান্ড অথোরিটি তৈরিঃ নিয়মিত ভাল কনটেন্ট তৈরি করার মাধ্যমে একটা ব্র্যান্ড গড়ে উঠতে পারে। প্রফেশনাল স্পেসে একটা বই লিখা, বা একটা কোর্স করানো বেশ বড় একটা এচিভমেন্ট। যার কনটেন্ট যত ভাল, তার ব্রান্ডিং তত ভাল।
নেটওয়ার্কিংঃ ইনডাস্ট্রিতে এক্সপার্ট প্রমাণ করার একটা উপায় বড় বড় প্রডাক্টে কাজ করা, আরেকটা উপায় হলো প্রডাক্ট গুলো সম্পর্কে ভাল কনটেন্ট তৈরি করা, সেগুলোর খুটিনাটি বিষয় আলোচনা করা। আর এগুলো নিয়ে আলোচনার কারণে এমন মানুষের সাথে নেটওয়ার্কিং হয় যাদের সাধারণত আপনি কোথাও পাবেন না।
ক্লায়েন্ট তৈরি করাঃ আমার অনেক ক্লায়েন্ট আমাকে গিটহাব ইস্যু আর স্ট্যাকঅভারফ্লো থেকে পেয়েছে। আমি জাস্ট মানুষের বিভিন্ন ইস্যু সলভ করে যে পরিমাণ ক্লায়েন্ট পেয়েছি, মানুষের কাছে কাছে গিয়েও সে পরিমাণ ক্লায়েন্ট পাইনি। কনটেন্ট তৈরি করার কারণে যা ইস্যু পেয়েছি, সেগুলা সলভ করতে গিয়ে চেইন রিএকশনের মত যে কনটেন্ট তৈরি করেছি; সবগুলোই একসময় না একসময় পটেনশিয়াল ক্লায়েন্ট আনার স্কোপ তৈরি করেছে।
সমাজে প্রভাব তৈরিঃ অন্যরা যদি শিখতে পারে, তাহলে আসলে সমাজের লাভ না? একটা স্কিলড ডেভেলপার খুজতে গেলে দেখা যায় পাওয়া যায় না; যার মূল কারণ রিসোর্স কাজে না লাগানো। যদি আপনি সঠিক কনটেন্ট তৈরি করেন, সেটার কারণে কারো লাইফ ও ক্যারিয়ার চেন্জ হয়ে যায়, তাতে আপনার যে মানসিক প্রশান্তি আসবে তা বলার বাইরে।
এখানে ইতিবাচক বা নেতিবাচক ভাবে নিজের সময় ব্যয় করে কমিউনিটির জন্য অনেক কিছুই করা যায়। এরপরেও আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য যদি আমরা আমাদের সময়কে কাজে লাগিয়ে সমাজের কিছু পরিবর্তন আনতে পারি, এবং একই সাথে নিজের লাইফ ও ক্যারিয়ারেও পরিবর্তন আনতে পারি, তাহলে এই সুযোগ কেন কাজে লাগাবো না?
এখন কিছু নেগেটিভ পয়েন্ট তুলে ধরতেই হয় যেগুলো আমাদের পারি দিতে হবে। কারণ আমাদের দেশে কনটেন্ট ক্রিয়েশন এখনো পজিটিভ স্কোপে যেতে পারেনি।
কনটেন্টের কোয়ালিটিঃ অনেকেই কনটেন্ট তৈরি করার ক্ষেত্রে কোয়ালিটির দিকে তাকাই না। কারণ যা দিচ্ছি তাই অনেক; কিন্তু এর কারণে মার্কেটে ভুল কনটেন্ট চলে আসার অনেকগুলো স্কোপ তৈরি হয়। মানুষ ভুলটা জানলে তারা লাইফে ভুলটা এপ্লাই করার সম্ভাবনা থাকে।
ইনকামের ইস্যুঃ বিনামূল্যে নিজের মূল্যবান সময় ব্যয় করে দিন রাত একাকার করে যারা কনটেন্ট তৈরি করেন, দিন শেষে অনেক ক্ষেত্রেই তারা এটার কোয়ালিটি ও মোটিভেশন ধরে রাখতে পারেন না। একই সাথে নিজের মূল্যবান সময় এখানে ব্যয়ের কারণে তার নিজের পেট চালাতেও ইস্যু তৈরি হতে পারে। কিন্তুু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে দেখা যায় পেইড কিছু আনতে গেলে হিতে বিপরীত হবার ব্যাপক সম্ভাবনা থাকে, প্রচুর গালাগালি হজম করা লাগে। দিন শেষে তারা তাদের সঠিক মূল্যায়ন পান না।
এত কিছুর পরেও যারা নিরলসভাবে কনটেন্ট তৈরি করেন, এবং নিজের ও সমাজের পরিবর্তনের চেষ্টা করেন, তারাই আসল জেমস, আমরা তাদের সঠিক মূল্যায়ন করা উচিৎ এবং তারা যেন তাদের মোটিভেশন হারিয়ে না ফেলেন সেটার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা উচিৎ।