জব মার্কেটে স্যালারির ক্যাচাল ও ছোট কোম্পানির ভাবনা

ছোট কোম্পানিগুলোতে যেখানে সাধারণত ৪-৫ জন এমপ্লয়ী থাকে সেখানের সাথে আপনি যদি মার্কেটের বড় বড় কোম্পানির তুলনা করেন তাহলে অবশ্যই তা ঠিক হবে না। বিশেষ করে বেতন কাঠামো নিয়ে একটা সমস্যা দেখা দেয় । এতো কম টাকা অফার করছে কেনো, রিক্সাওয়ালারা এর চাইতে বেশি ইনকাম করে, হ্যান ত্যান ইত্যাদি।

ছোট স্টার্টআপ কোম্পানিগুলো যারা চালান, বা সবে যারা শুরু করেছেন তারা যখন নতুন কোন জব পোস্ট করেন তাদেরকে অনেক বিষয় হিসাব নিকাশ করতে হয়।

বিশেষ করে নতুন কোম্পানির শুরুতেই যদি আপনি অনেক টাকা স্যালারি দিয়ে হায়ার করা শুরু করেন তাহলে আপনাকে যে কয়েক মাস সময় ভর্তুকি দিতে হবে সেটি চালিয়ে নেওয়ার মতো সক্ষমতা থাকতে হবে। এই সক্ষমতাটি সবারই থাকবে এটা ভাবার কোন কারণ নেই। আমি অনেককে দেখেছি বিশাল বড় বড় অফিস নিয়ে, অনেক টাকা দিয়ে লোক হায়ার করে পরে কোম্পানি বন্ধ করে দিতে হয়েছে।

আপনি যদি লক্ষ্য করেন দেখবেন, ছোট যে কোম্পানিটির সাথে চার পাঁচজন একসাথে কাজ করছে তারা হয়তো একেবারে শুরু থেকে আছে। কেউ কেউ হয়তো যোগ্যতা ছাড়াই ঢুকে পড়ে, কাজ শেখার সুযোগ পায় আস্তে আস্তে নিজের দক্ষতা বৃদ্ধির সাথে তাদের বেতন বাড়তে থাকে। তারা কখনো কিন্তু এই প্রশ্নটিই আপনাকে করবে না, আপনি কেন তাদের যোগ্যতা না থাকলেও সুযোগ দিলেন।

আপনি যখন এরকম একটি ছোট স্টার্টআপ কোম্পানির মালিক হবেন আপনি চাইলেই মার্কেট স্ট্যান্ডার্ড স্যালারি দিয়ে লোক নিয়োগের জন্য পোস্ট করতে পারবেন না। কারণ আমরা সাধারণত জব পোস্ট করে থাকি ফেসবুকে। আপনার ফেসবুকে জব পোস্ট দেখে পরের দিন আপনার এমপ্লয়ীরা বলা শুরু করবে নতুন লোক নেওয়া হচ্ছে তাদের থেকে বেশি বেতনে। এরকম বাস্তবতার সাথে যারা পরিচিত তারা জানেন এই পরিস্থিতি হ্যান্ডেল করা কতটা কষ্টকর ও বিব্রতকর। নতুন একজনকে নিয়োগ দেওয়ার ক্ষেত্রে আপনি হয়তো তাকে এখন বেশি টাকা অফার করছেন কারণ আপনি আর কাজ শেখাবেন না, আপনি কোয়ালিটি ফুল এমপ্লয়ী নেওয়ার কথা ভাবছেন। কিন্তু আপনার পুরাতন এমপ্লয়ীরা ভেবে নিবে আপনি তাদেরকে ঠকাচ্ছেন। এ কারণে অনেক সময় স্যালারির চাইতে জব রিকোয়ারমেন্টস, বা দক্ষতা বেশি চাওয়া হয় ব্যালেন্স করার জন্য। যাতে অন্তত যারা আগে কাজ করছে তারা ভাবতে পারে, নতুন যাকে নেওয়া হচ্ছে সে আমার চাইতে অভিজ্ঞ হবে।

এরকমই চরম বাস্তবতার মধ্যে আপনি যখন মোটামুটি রেঞ্জের একটা স্যালারি অফার করে জব পোস্ট করবেন, এবার শুরু হবে আপনার উপর দ্বিতীয় অত্যাচার। যে হয়তো জীবনে কখনো চাকরি করবে না, সে আপনার পোস্টে হাহা দিয়ে বসবে, বিভিন্ন উদাহরণ দেওয়া শুরু করবে। আপনার সক্ষমতার বাইরে আপনি তো আর কোম্পানি চালাতে পারবেন না।

যাইহোক এ বিষয়ে আপনাদের দ্বিমত থাকতেই পারে। যেহেতু এখানে দুটি পক্ষ চাকরি প্রত্যাশী এবং চাকরি দাতা। দুজনের দিক থেকে চিন্তা করলে দুই রকম অভিমতই আসবে। তবে চাকরির প্রত্যাশীরা যখন নিজের কোম্পানির মালিক হবে তখন তাদের চিন্তা অবশ্যই পরিবর্তন হবে কারণ তাদেরকে ছোট থেকে শুরু করতে হবে।

13 Likes

আপনি একদম বাস্তব চিত্র তুলে ধরেছেন ভাই। আমার নিজের অফিস এ ৪ জন টিম মেম্বার, আপনার উল্লেখকৃত বাস্তবতা ফেস করে আসছি। আপনার প্রথম লেখা ভালো লাগলো। আশা করি নিয়মিত লিখবেন আপনি।

3 Likes

সেইম সমস্যার সম্মুক্ষিন অনেকবার হয়েছি ভাই। একদম বাস্তব সম্মত বিষয়টি তুলে ধরার জন্য অনেক ধন্যবাদ। আমরা অনেকেই এই পরিস্থিতি বুঝতে চাইনা। নিজে ছোট একটা টিম গড়তে শুরু করলে তখনই কেবল বোঝা যায়।আমি দেখেছি অনেক পরিচিত ভাই যারা চাইলেই ৪-৫ জনের একটা টিম গড়ে চাকুরির সুযোগ তৈরি করতে পারবেন তার টিম করতে সাহস পান না জাস্ট এই বুলিং এর ভয়ে। ফলাফল নতুন চাকুরির সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে না। নতুন উদ্যোক্তাও তৈরি হচ্ছে না। অথচ যাদের কারণে ক্ষতিটা হচ্ছে তাদের বেশিরভাগই জীবনে চাকুরি করবেন বা নিজে হয়তো কোনদিন টিম বিল্ড করেওনি।

এসব বিষয়ে আমাদের প্রত্যেকের সচেতন হওয়া উচিৎ। আপনাকে ধন্যবাদ এমন একটা বিষয় তুলে ধরার জন্য।

2 Likes

এটাই আসলে মূল কথা । নিজে টেক্সটাইল গার্মেন্টস এর মত জায়গায় চাকরি করে এরপর স্টার্টআপ শুরু করার কারণে এ বিষয়গুলো খুব ভালোভাবে ফেস করেছি।

ইনশাল্লাহ লেখার চেষ্টা করব । @rasel ভাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ এত সুন্দর একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করার জন্য। ফেসবুকে আজকাল লিখতে ভালো লাগেনা ওদের নানাবিধ রেস্ট্রিকশন ও গাইডলাইন্ কারণে।

2 Likes