এক ছিল দেশ, নাম তার বাঙ্গিল্যান্ড। এখানে বেশিরভাগ মানুষ দরিদ্র, রাস্তা ভাঙাচোরা, হাসপাতাল আছে কিন্তু ওষুধ নেই, আর স্কুলগুলোতে শিক্ষকের বদলে ছাগল দিয়ে পড়ানো হয়। দুঃখ দুর্দশার মধ্যেই চলছিল তাদের জীবন। একদিন দূরদেশ থেকে একদল লোক আসে। তারা খুবই দয়ালু, তাদের দেশটার নাম স্ট্রবেরি ল্যান্ড। তারা বলে,
“আমরা তোমাদের সাহায্য করতে এসেছি! টাকাপয়সা দেব, যেন তোমাদের জীবন সুন্দর ও উন্নত হয়!”
বাঙ্গিল্যান্ডের সাধারণ মানুষ তো খুব খুশি। তারা ভাবে, এবার বোধহয় সত্যি কিছু পরিবর্তন আসবে। কিন্তু দিন যায়, মাস যায় সব আগের মতোই থাকে। কোথায় গেল সেই টাকা? আসুন দেখি!
১. সাহায্য কে পায়? কোথায় যায় সেই টাকা?
বাঙ্গিল্যান্ডের একজন মহাপ্রধান আছেন, নাম তার বিগ বস। সব টাকা প্রথমে তার হাতেই আসে। সবাই ভাবে, এই টাকা দিয়ে নতুন রাস্তা হবে, হাসপাতাল ঠিক হবে, স্কুলে শিক্ষক আসবে। কিন্তু বিগ বসের পরিকল্পনা আলাদা।
তিনি প্রথমেই টাকা দেন তার সুপার সাপোর্টারদের, মানে যারা তাকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখে। তারা সেই টাকা দিয়ে নতুন গাড়ি কেনে, পাঁচতারা রেস্টুরেন্টে খায়, বিদেশ ভ্রমণে যায়। বাঙ্গিল্যান্ডের সাধারণ মানুষ তখনো সেই ভাঙা রাস্তায় হোঁচট খায়, হাসপাতাল গিয়ে দেখে ডাক্তার নেই, স্কুলে গিয়ে দেখে ছাগলই এখনো তাদের শিক্ষক।
২. কত টাকা দেওয়া হবে? সেটা ঠিক কিভাবে হয়?
স্ট্রবেরি ল্যান্ডও কিন্তু বোকা না! তারা হিসাব কষেই টাকা দেয়। এখানে তারা দুইটা সূত্র মেনে চলেঃ
যদি বাঙ্গিল্যান্ডে জনগণের মতামত গুরুত্ব পায় মানে একটা গণতান্ত্রিক দেশ হয়, তাহলে স্ট্রবেরি ল্যান্ডকে অনেক বেশি টাকা দিতে হয়। কারণ তখন মানুষ বা জনগণ সহজে রাজি হয় না, তাদের অনেক কিছু বোঝাতে হয়, ক্ষতিপূরণ দিতে হয়।
কিন্তু বাঙ্গিল্যান্ডের বিগ বস যদি একাই সব সিদ্ধান্ত নেয় বা স্বৈরাচার হয় তাহলে টাকা কম দিলেই চলে! কারণ একজনকে খুশি করতে আর কতই বা দেয়া লাগে?
এখন যদি স্ট্রবেরি ল্যান্ড চায় বাঙ্গিল্যান্ড তাদের কোনো অদ্ভুত নিয়ম মেনে চলুক, আর সেই নিয়ম যদি বাঙ্গিল্যান্ডের জনগণ পছন্দ না করে, তাহলে স্ট্রবেরি ল্যান্ডকে আরও বেশি টাকা ঢালতে হবে। বিগ বস তখন স্ট্রবেরি ল্যান্ডকে বলে,
“দেখো ভাই, আমার জনগণ তো একদম জ্বালিয়ে দিচ্ছে! আমাকে আরও টাকা দাও, ওদের শান্ত করতে হবে!”
৩. সাহায্য দেওয়া হয় কেন?
স্ট্রবেরি ল্যান্ড কি সত্যিই বাঙ্গিল্যান্ডের গরিব মানুষদের ভালোবাসে? না, ব্যাপারটা এত সহজ না।
স্ট্রবেরি ল্যান্ড চায় বিগ বস তাদের কথা শুনুক, তাদের ব্যবসার সুবিধা দিক, তাদের চাহিদা মেনে চলুক।
আর বিগ বস চায় যত বেশি টাকা সম্ভব তার নিজের হাতে আসুক।
এই লেনদেনের মাঝে কিন্তু সাধারণ বাঙ্গিল্যান্ডবাসীদের জন্য কিছুই নেই!!
৪. সাহায্যের ফলাফল কী হয়?
স্ট্রবেরি ল্যান্ড ভাবে, “আমরা তো এত টাকা দিলাম, বাঙ্গিল্যান্ডের লোকেরা আমাদের ভালোবাসবে!”
কিন্তু বাস্তবতা উল্টো।
বাঙ্গিল্যান্ডের সাধারণ মানুষ দেখে, স্ট্রবেরি ল্যান্ডের টাকা তাদের জীবনে কোনো পরিবর্তন আনেনি। বরং এতে বিগ বস আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে, তার অনুসারীরা আরও ধনী হয়েছে, আর সাধারণ মানুষ আরও গরিব হয়েছে।
তারা ভাবতে শুরু করে, “স্ট্রবেরি ল্যান্ড আসলে আমাদের সাহায্য করতে আসেনি। ওরা বিগ বসকে আরও শক্তিশালী করেছে!”
ফলাফল? বাঙ্গিল্যান্ডের মানুষ স্ট্রবেরি ল্যান্ডকে ঘৃণা করতে শুরু করে।
৫. তাহলে আসলেই সাহায্য করতে চাইলে কী করতে হবে?
Bueno de Mesquita আর Smith বলেন, সাহায্য যদি সত্যি মানুষের জন্য কাজে লাগাতে হয়, তাহলে কিছু নিয়ম বদলানো দরকার।
১. সরাসরি সরকারকে টাকা না দিয়ে, NGO-এর মাধ্যমে সাহায্য দেওয়া
NGO-রা ছোট ছোট প্রকল্প চালায়—যেমন বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ, চিকিৎসা সেবা, শিক্ষা ব্যবস্থা। এতে বিগ বসের হাতে টাকা যায় না, বরং সাধারণ মানুষের কাজে লাগে।
২. টাকা তখনই দেওয়া হবে, যখন সত্যিকারের পরিবর্তন আসবে
মানে, প্রথমে কাজ, তারপর টাকা। যদি বিগ বস বলে, “আমরা পরিবর্তন আনবো!”, তাতে কোনো টাকা নয়। পরিবর্তন আসার পরেই কেবল সাহায্য দেওয়া হবে। এতে বিগ বসও আসলেই কাজ করতে বাধ্য হবে।
সাহায্য মানে কী, আর আসল সত্যটা কী?
সাহায্য মানে আসলে যা মনে হয়, বাস্তবে তা নয়। বাইরে থেকে দেখে মনে হয়, স্ট্রবেরি ল্যান্ড দরিদ্র বাঙ্গিল্যান্ডের পাশে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু বাস্তবে?
স্ট্রবেরি ল্যান্ড আসলে বিগ বসের সঙ্গে চুক্তি করে, নিজেদের স্বার্থ আদায় করছে।
বিগ বস সুযোগ নিচ্ছে, টাকা নিয়ে নিজের ক্ষমতা আরও শক্তিশালী করছে।
সাধারণ বাঙ্গিল্যান্ডবাসীরা? ওরা কারা??
হাহা, এটাই বাস্তব।
ফুটনোট: পুরো লেখাটি The Dictator’s Handbook বইয়ের “Foreign Aid” অধ্যায় থেকে অনুপ্রাণিত।