কেন ভোরে ঘুম থেকে উঠবো ?? কিভাবে পারবো ১২ টা বাদ দিয়ে ৫ টাই উঠতে ??

সবার মনে কমন কিছু প্রশ্ন আছে.

আমার অমুক ভাই আমার তমুক ভাই তো সারারাত জেগে কাজ করে, তারা জীবনে অনেক সাকসেসফুল আমি করলে সমস্যা কি ??

ডেভেলপমেন্ট ক্যারিয়ারে আসার আগেই তো নিজেকে প্রস্তুত করেই এসেছি যে আমি সারারাত জেগেই কাজ করবো | রাত্রে তো ঠান্ডা পরিবেশ থাকে আরামসে কাজ করা যায় কেন এই আরাম বাদ দিব ??

আবার অনেকবার চেষ্টাও করেছি সকালে উঠতে কিন্তু পারিনা, তার জন্য এখন আর চেষ্টা করাই বাদ দিয়ে দিছি.

তার উপরে সকালে আরামসে ঘুমোচ্ছি, কেন এই আরামের ঘুম হারাম করবো ??

চলেন আমরা স্টেপ বাই স্টেপ একটু Discuss করি কেন আমরা এই আরামের ঘুম হারাম করবো.

প্রথম কথা - Time Management: আমি হিসাবের সুবিধার্থে রাত জাগাকে বলতে রাত 12:00 টার পরে জাগাকে বলতে বোঝাচ্ছি । আমরা যারা রাত জাগী তারা হয়তো সর্বোচ্চ 3:00 বা 4:00 টা পর্যন্তই জেগে থাকি ।যদি আমরা রেগুলার 3:00 পর্যন্ত জেগে কাজ করি তাহলে আমরা 3 ঘন্টা বেশি কাজ করলাম।আর আমরা এই 3 ঘন্টা বেশি কাজ করার জন্য পরের দিন ঘুম থেকে উঠতেসি দুপুর 12টায়। একটু দয়া করে হিসাব করে দেখুন যদি আমরা ভোর 5 টায় ঘুম থেকে উঠতাম তাহলে আমরা কত ঘন্টা বেশি টাইম পেতাম আমাদের কাজ এবং অন্যান্য জিনিসপত্র করার জন্য। আমরা বাঙালি আমরা হিসাব তো অনেক ভালো বুঝি, তার মানে এই দাঁড়ালো যে 3 ঘন্টা আনপ্রোডাক্টিভ কাজ করার জন্য আমরা সুপার প্রোডাক্টিভ 7 ঘণ্টা আমাদের লাইফ থেকে হারিয়ে ফেললাম। তো আর কতদিন এই লসের ভিতরে থাকবেন একটু নিজেকে প্রশ্ন করে দেখুন।

দ্বিতীয় কথা - কাজের উপরে মনোযোগ : বিভিন্ন সাইন্টিফিক গবেষণায় দেখা গেছে আমাদের ব্রেন সকালে প্রায় 90% কর্মদক্ষতাই থাকে। অন্যদিকে রাত 10টার পরে আমাদের ব্রেনের কর্মদক্ষতা কমে 40% এ নেমে আসে । তো বুঝতেই পারতেছেন এই রাতের সময়ে যদি আমরা লার্নিং রিলেটেড কোন জিনিস করি তাহলে এটা আমাদের জন্য খুব বেশি ভালো ডিসিশন হবে না ।

তৃতীয় কথা - স্বাস্থ্যগত সমস্যা : ওরে বাবা কি আর বলবো এখানে তো ভয়াবহ অবস্থা। Chatgpt এর কাছে জিজ্ঞেস করলাম রাতে দেরি করে ঘুমালে কি কি স্বাস্থ্য ঝুঁকি আছে আমাকে একটু বলো। ও আমাকে এটা বললো

  • ভিটামিন ডি ঘাটতি: সকালে রোদ না পেলে শরীরে ভিটামিন ডি উৎপাদন কমে যায়, যা হাড় ও ইমিউন সিস্টেমের জন্য ক্ষতিকর।
  • ওবেসিটি বা স্থূলতা: দেরিতে ঘুম থেকে উঠলে সকালের নাশতা মিস হতে পারে, যা অস্বাস্থ্যকর খাবারের প্রতি আকর্ষণ বাড়ায় এবং ওজন বৃদ্ধির কারণ হতে পারে।
  • হৃদরোগের ঝুঁকি: ঘুমের অনিয়ম দীর্ঘমেয়াদে উচ্চ রক্তচাপ এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

আরো অনেক সমস্যা হতে পারে আমি একটা দুইটা বললাম। তাহলে আরেকবার ভেবে দেখুন যে রাত্রে 1-2 ঘণ্টা একটু বেশি কাজ করার জন্য লং টার্মে এই রোগগুলো আপনি ওয়েলকাম করতেছেন কিনা।

চতুর্থ কথা-মানসিক সমস্যা : এই যে এখন আমরা কোন একটা টপিকের উপর লং টার্ম ফোকাস করতে পারছিনা, আমাদের ফোকাস করার ক্ষমতা কমে যাচ্ছে , তারপর আমাদের একটা রোগ লেগেই থাকে (কিছুই ভালো লাগে না ) রোগ, আবার আমাদের ধৈর্য কমে যাচ্ছে এইসব কিছুর মুলে রয়েছে ভোরে ঘুম থেকে না ওঠা।

So, উপরের চারটা পয়েন্ট থেকে আমরা বুঝতে পারলাম জীবনটাকে সুন্দর করার জন্য আসলেই সকালে ঘুম থেকে উঠার বিকল্প কিছুই নেই। এখন কথা হলো এগুলো আমরা ছোটবেলা থেকে অনেক শুনে আসতেসি।ছোটবেলায় ক্লাসেও পড়েছি

“Early to bed and early to rise makes a man healthy, wealthy, and wise.”

– Benjamin Franklin

কিন্তু কথা হলো চেষ্টা করি কিন্তু পারিনা। চলুন এইবার আমরা একটু স্টেপ বাই স্টেপ ডিসকাস করি যে আমরা কিভাবে সকালে আসলেই উঠতে পারি।

প্রথম কথা - ইচ্ছা শক্তি : একটু ভেবে দেখুন তো যেদিন আমাদের সকালে ভোরবেলায় উঠে পিকনিকে যেতে হবে অথবা সকালে ভোরে 5:00 টার সময় ট্রেন বা বাস ধরতে হবে । ওইদিন কেমনে জানি আমরা যে টাইমে অ্যালার্ম দিই ওই টাইমে আগেই উঠে পড়ি । তাহলে অন্যান্য দিন আমরা কেন উঠতে পারিনা ? এর মূল কারণ হলো আমাদের ইচ্ছাশক্তি অথবা আরেকটু ভিতর থেকে বলতে গেলে আমাদের অবচেতন মন (subconscious mind )। এই অবচেতন মন (subconscious mind) সম্পর্কে ডেল কার্নেগীর একটা দারুন বই আছে “The Power of Your Subconscious Mind”। আপনারা চাইলে এটা পড়ে দেখতে পারেন। তো আমরা যেটা বলতেছিলাম আমরা কেনো অন্যান্য দিন সকালে উঠতে পারি না, এটার প্রধান কারণ হলো আমরা আমাদের অবচেতন মনকে এটা বোঝাইতেই পারি না যে সকালে ওঠা আমাদের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। এক কথায় বলতে গেলে আমাদের রাত্রে ঘুমাইতে যাওয়ার আগেই জেগে জেগে স্বপ্ন দেখতে হবে যে সকালবেলা আমরা উঠতে পারতেছি। এবং এটাকে ফাস্ট প্রায়োরিটি হিসেবে সেট করতে হবে । এবং ওই যে বললাম ইচ্ছাটা থাকতে হবে সকালের আরামের ঘুমকে হারাম করার।

দ্বিতীয় কথা - কিছু টিপস :

  • রাত্রে তাড়াতাড়ি ঘুমাইতে যাইতে হবে। বেডে যাওয়ার পর ফোন ইউজ করা যাবে না।
  • Most important -একটি Alarm অ্যাপ ইউজ করতে হবে, যেখানে অ্যালার্ম অফ করতে গেলে কিছু টাস্ক কমপ্লিট করতে হবে যেমন কিছু ম্যাথ সলভ করা অথবা কোনো পাজেল সলভ করা. Google play store এ Alarm clock with task লিখে সার্চ দিলে অনেক অ্যাপ পেয়ে যাবেন।
  • রাতের খাবারটা চেষ্টা করতে হবে যত তাড়াতাড়ি সেরে ফেলা যায়।
  • ঘুমানোর 1-2 ঘন্টা আগে স্ক্রিন এভোয়েড করতে হবে এতে রাতের ঘুমটা অনেক ভালো হবে সকালে উঠতে সহায়তা করবে। ( If Possible )

সর্বশেষ যারা এটা পড়েছেন এবং চেষ্টা করতেছেন সকালে ওঠার জন্য তাদের জন্য শুভকামনা এবং দোয়া রইল। সময় দিয়ে এটা পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

23 Likes

অনেক সুন্দর পরামর্শ দিয়েছেন

2 Likes

Thanks vai… Jajakallahu khair

আপনি একটি অনবদ্য ও অসাধারণ পরামর্শ দিয়েছেন :heart::sunglasses:

1 Like

Thank you vai… Jajakallahu khair

অনেক সুন্দর পরামর্শ। চেষ্টা করঠি বাট উঠতে পারিনা। ফজর পড়ে আবার ঘুমাই

1 Like

অনেক সুন্দর পরামর্শ। শেষ ৪ টি পয়েন্ট খুব সুন্দর ছিল

ইনশাআল্লাহ অবশ্যই পারবেন ভাই । আল্লাহর কাছে চান আল্লাহ অবশ্যই আপনাকে সকালে ওঠার এবং জেগে থাকার তৌফিক দান করবেন। দোয়া রইল আপনার জন্য, আমার জন্য দোয়া করবেন ভাই।

1 Like

দারুন কার্যকরী একটা লিখা লিখেছেন। ধন্যবাদ।

1 Like

You are most welcome brother. Jajakallahu khair.

খুবই সুন্দর পরামর্শ । আল্মাহদুল্লিয়াহ সকাল বেলা উঠার চেষ্টা করি ।

1 Like

ইনফরমেটিভ ছিলো ভাই, ধন্যবাদ।

1 Like