মানুষের জীবনে সবচেয়ে কঠিন সময় কোনটি জানেন? আমার কাছে মনে হয় পড়াশোনা শেষ করে চাকরি পাওয়া অথবা নিজের পায়ে দাড়ানোর আগ মূহুর্ত পর্যন্ত যে সময়, সেই সময়টি সবচেয়ে কঠিন সময়। অনেকেই চাকরি নিয়ে চিন্তা করে না, কারণ বাবার অবস্থা ভালো। পড়াশোনা শেষ করে বাবার ব্যবসা দেখাশোনা করার কাজে নেমে পড়ে। অনেকের বাবা চায় না অন্যের প্রতিষ্ঠানে তার সন্তান চাকরি করুক। তাই নিজের প্রতিষ্ঠানে সন্তানকে একটা ভালো স্থানে বসিয়ে দেন।
যাইহোক, বলছিলাম বেকার জীবনের কথা। এই জীবনটা খুবই বেদনাদায়ক। শহরের সবচেয়ে সুন্দরী মেয়েটিকে প্রেমিকা হিসেবে পেলেও বেকারত্বের বেদনা একজন বেকারের শরীর থেকে সরতে চায় না। বরং আরও বেড়ে যায়। এই সময়ে অনেকেই প্রচুর হতাশায় ভুগে। এলাকার মুরব্বিদের থেকে দূরে দূরে থাকে। চাকরির ইন্টারভিউ দেয়ার আগেই মনের মধ্যে প্রবল আত্মবিশ্বাস জন্মে যায় যে, চাকরিটা তার হবে না। একসময় কোন কিছুর প্রতিই সে ভরসা রাখতে পারে না।
বেকারদের মগজধোলাই করে নিজেদের স্বাবলম্বী করা অনেক বুজুর্গ আছে এই উপমহাদেশে। কতো ধরনের আকাশ ছোয়া স্বপ্ন দেখায় তারা। বাংলা সিনেমার মতো এক গানের মধ্যেই ঠেলাগাড়ি ঠেলতে ঠেলতে টেম্পু, ট্যাক্সি, এরপর শিল্পপতি হয়ে মার্সিডিজ বেঞ্জ ব্র্যান্ডের গাড়িতে। অনেকেই চমক দেয় ত্রিশ দিনের প্রশিক্ষণের পর মাসে লক্ষাধিক টাকা উপার্জন করতে পারবেন। আহা! টাকা উপার্জন এতো সহজ!
অনেকেই বলেন, ঘরে বসে অনলাইনে ফ্রিল্যান্সিং করে মাসে লক্ষাধিক টাকা উপার্জন করতে পারবেন। আরও কতো কি!
হ্যাঁ অনেকেই ঘরে বসে লক্ষাধিক না মাসে দশ লক্ষাধিক টাকাও উপার্জন করে। তাদের কাজ, পরিশ্রম আর চোখ-মুখ বলে দেয় এতো টাকা উপার্জনের পেছনের দৃশ্যপট। পরিশ্রম আর একাগ্রতা ছাড়া টাকা উপার্জন হাতের মোয়া না ভাই।
প্রতিটি কাজের পেছনে রয়েছে শারিরীক ও মানসিক পরিশ্রম। পরিশ্রম ছাড়া কোন কাজের কথা কেউ বললে সেটা প্রতারণা ছাড়া আর কিছু নয়। পৃথিবীতে কোন কাজই পরিশ্রম ছাড়া সম্ভব হয়নি। হতে পারে সেটা শারিরীক অথবা মানসিক অথবা দুটোই। কারণ প্রতিটি শারিরীক পরিশ্রমের সাথেই মনস্তাত্ত্বিক চিন্তাধারার সম্পর্ক রয়েছে।
ছাত্রজীবন আর পেশাগত জীবন দুটো একেবারেই ভিন্ন। ছাত্রজীবন যার যেমনই হোক পেশাগত জীবনে অন্যের চেয়ে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব। কাজের দক্ষতা যার যতো বেশি, সে ততো বেশি সামনে এগিয়ে যাবে এটাই স্বাভাবিক। ক্রিয়েটিভ স্কিলের মূল্যায়ন সবজায়গাতেই আছে। ইনোভেশন আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর। একটি কাজ কিভাবে নতুন মাত্রায় আরও সহজতর করা যায়, সেই চিন্তা করতে হবে।
শর্টকাট পদ্ধতিতে যারাই টাকা উপার্জনের চিন্তাভাবনা করেছে তারাই ডেসটিনির মতো ডেসটিনেশন হারিয়ে ফেলেছে। তাই বেকারদের প্রতি পরামর্শ- হতাশ না হয়ে, বাতাসে ধনী হওয়ার স্বপ্ন না দেখে, পরিশ্রম করে ধনী হওয়ার মতো একাগ্রতা তৈরি করতে হবে। আর মনে রাখতে হবে মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। প্রত্যেকটা মানুষের মধ্যেই আল্লাহতালা/সৃষ্টিকর্তা বিশেষ স্কিল বিল্ট-ইন করে দিয়েছেন। এবং এইগুলো বের করে আনার দায়িত্ব মানুষের উপরই দিয়েছেন।
Mostafizur Rahman Shamim
Assistant Professor
Department of English
Bheramara Govt. College