প্রতিটি সেক্টরের সফল মানুষদের কিছু স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য বা গুণ থাকে। একজন সফল ডিজিটাল মার্কেটার হতে হলে টেকনিক্যাল গুণগুলোর পাশাপাশি আরও কিছু বিশেষ গুণ বা দক্ষতা থাকতে হবে। যেগুলো অন্য সকল ডিজিটাল মার্কেটার থেকে আপনাকে আলাদাভাবে পরিচিত করবে। বর্তমান সময়ে অনেকেই ডিজিটাল মার্কেটিং শিখতে চাচ্ছেন বা ইতোমধ্যে শুরু করেছেন। এখন সবার থেকে নিজেকে আলাদা করার জন্য বিশেষ কিছু গুণ থাকা জরুরি। এবার গুনগুলো নিয়ে আলোচনা করা যাক:
জানার আগ্রহ
একজন সফল মার্কেটার হতে হলে প্রতিনিয়তই কিছু না কিছু জানতে হবে। আপনি যে বিষয় নিয়ে কাজ করবেন সে বিষয় সম্পর্কে নতুন নতুন তথ্য যা আপনার জানা নেই তা জানার আগ্রহ সৃষ্টি করতে হবে। আমি সব জানি এই মনোভাব পরিত্যাগ করতে হবে। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন কলাকৌশল এবং সম্ভাবনাগুলো জানতে হবে। আজ যে বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন সেটি আগামীতে কাজ নাও করতে পারে। প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তিগুলো সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখতে হবে। আর এজন্য জানাটা জরুরি। আপনার যদি জানার প্রবল আগ্রহ থাকে তাহলে ইনশাআল্লাহ আপনাকে সফল হওয়ার দৌড়ে তা এক ধাপ এগিয়ে রাখবে অন্যদের থেকে।
প্রতিযোগিতাপূর্ণ মনোভাব
প্রফেশনাল লাইফে সর্বত্রই প্রতিযোগিতা রয়েছে। একটি অফিসে দশ জন একসাথে চাকরি করে এখানে সবার মধ্যে একটি প্রতিযোগিতা কাজ করে, কে কতটা বেশি দায়িত্বশীলতার সাথে নিজের সেরা পারফরম্যান্স করতে পারে। নিজেকে সফল ডিজিটাল মার্কেটার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে হলে প্রতিযোগিতার মনোভাব থাকাটা জরুরি। আপনি যদি প্রতিযোগিতাপূর্ণ মনোভাব না রাখেন তাহলে অন্যান্য সফল মার্কেটারদের থেকে সফলতার দৌড়ে শুরুতেই পিছিয়ে থাকবেন, কারণ আপনার প্রতিযোগিতার কোনো মনোভাব নেই। এজন্য যারা ভালো কাজ করছে তাদের সাথে প্রতিযোগিতা করে নিজের অবস্থানকে যাচাই করতে হবে। তবে তার মানে এই না যে আপনি অন্যান্য ডিজিটাল মার্কেটারদের সাথে শত্রুভাবাপন্ন আচরণ করবেন। প্রতিযোগিতা যেনো আপনাকে হিংসাত্মক কোনো কর্মকাণ্ডে লিপ্ত না করে। আপনি অন্যের ক্ষতি না করে নিজের অবস্থানকে উন্নত করার জন্য যদি এই প্রতিযোগিতাপূর্ণ মনোভাবটি ধরে রাখেন তাহলে ইনশাআল্লাহ আপনাকে একজন সফল মার্কেটার হতে সহযোগিতা করবে। এক্ষেত্রে একটি বিষয় মনে রাখবেন প্রতিযোগিতা সবসময় অনেক বেশি ইনকাম করার জন্য হওয়া উচিত নয়। প্রতিযোগিতা হওয়া উচিত একে অন্যের মধ্যে ভালো কাজের। এই প্রতিযোগিতা আবার যেন আপনাকে আখেরাতবিমুখ না করে তোলে সেটিও মাথায় রাখতে হবে।
ইতিবাচক মনোভাব
কোনো একটি কাজ করতে গেলে সমস্যা বা বাধা-বিপত্তি আসাটাই স্বাভাবিক। এজন্য বিচলিত হওয়া যাবে না বরং ইতিবাচক মনোভাব ধরে রাখতে হবে। যে মানুষটি কোনো কাজই করে না সে কখনো কাজ সংক্রান্ত সমস্যায় পড়বে না, আপনি কাজ করছেন বলেই সমস্যায় পড়ছেন, সমস্যা সমাধানের উপায় বের করছেন। আপনি যদি মনোবল না হারিয়ে আপনার ইতিবাচক মনোভাবকে ধরে রাখেন তাহলে তা ভবিষ্যতে বড় বড় সমস্যাগুলোকেও মোকাবেলা করার জন্য আপনাকে সাহস জোগাবে। আপনি যদি সফল মার্কেটার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চান তাহলে অবশ্যই সব সময় ইতিবাচক মনোভাব রেখে কাজ করে যেতে হবে। কোনো একটি কাজে রাতারাতি সফলতা আসবে না এজন্য লেগে থাকতে হবে এবং নিজেকে ইতিবাচকভাবে প্রস্তুত করতে হবে। এক্ষেত্রে আমার পরামর্শ থাকবে নেতিবাচক মানুষগুলো থেকে দূরে থাকুন। একজন মুসলমান কখনো হতাশ হতেই পারে না। সে সর্বদা আল্লাহর ওপর ভরসা রাখবে। এজন্য যারা পজিটিভ এবং ইতিবাচক মানুষ তাদের সংস্পর্শে বেশি বেশি থাকুন। নিজের ইমোশনের ওপর নিয়ন্ত্রন থাকা খুব জরুরি। কাজে ব্যর্থতার জন্য হতাশ না হয়ে সেই ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে আবার ঘুরে দাঁড়াতে হবে এই মানসিকতা থাকলে সব সময় ইতিবাচক থাকা যায়। এই উদাহরণটি প্রতিটি ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
সৃজনশীলতা
ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের কাজগুলো করার জন্য অবশ্যই আপনাকে সৃজনশীল হতে হবে। নিজের প্রতিভাকে কাজে লাগিয়ে নিজস্ব চিন্তাশক্তির মাধ্যমে নতুন কিছু প্রকাশ করার মাধ্যমেই সৃজনশীলতা তৈরি হবে। যেকোনো ধরনের সৃজনশীল কাজ করতে হলে প্রয়োজন হয় কল্পনাশক্তি ও গভীর চিন্তার। যে যত বেশি সৃজনশীলতার চর্চা করবে, দিনে দিনে তার কল্পনাশক্তি ততই প্রখর হবে। এই কল্পনাশক্তি ধীরে ধীরে জ্ঞানের নতুন দ্বার উন্মোচন করে সৃজনশীল হিসেবে আপনাকে তৈরি করবে। সৃজনশীল কাজের মাধ্যমে ডিজিটাল মার্কেটিং সেক্টরে সফল হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়। আপনি যখন ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের জন্য কাজ করবেন তখন অন্যান্য পণ্য বা সেবা থেকে আপনার পণ্য বা সেবা টিকে সৃজনশীলভাবে আরো বেশি গ্রহণযোগ্য করে তুলতে হবে।
যোগাযোগ দক্ষতা
যোগাযোগ দক্ষতা একটি গুরুত্বপূর্ণ গুণ ডিজিটাল মার্কেটারের জন্য। একজন ডিজিটাল মার্কেটার হিসেবে আপনাকে ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে সংযোগ স্থাপন করতে হবে। এখানে যোগাযোগ দক্ষতা অনেক বড় ভূমিকা রাখবে। এখানে বিভিন্ন ধরনের ডিজিটাল প্লাটফর্ম ব্যবহার করে ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে যোগাযোগ তৈরি করতে হবে, তাই একজন ডিজিটাল মার্কেটারের জন্য এই গুণটি অনেক বেশি প্রয়োজন।
বিশ্লেষণ ক্ষমতা
কোনো একটি বিষয় নিয়ে কাজ করতে গেলে সেই কাজটির প্রতিটি বিষয়ে বিশদভাবে ঘেঁটে খুঁটিনাটি জানতে পারলে সেখানে সফল হওয়া সহজ হয়। অনেক সময় ছোটখাটো বিষয়কে বিশ্লেষণ করে অনেক বড় বড় সমস্যার সমাধান আগে ভাগে করা যায়। আপনি যখন চিন্তাভাবনা করে বিশদভাবে কোনো কিছু বিশ্লেষণ করে কাজ করবেন তা আপনাকে আপনার প্রতিযোগীদের থেকে সামনের দিকে এগিয়ে রাখবে ইনশাআল্লাহ। ডিজিটাল মার্কেটিং সেক্টরে প্রতিটি কাজ নির্ভুলভাবে করার জন্য বিশ্লেষণী ক্ষমতা থাকাটা জরুরি।
ধৈর্য
যেকোনো কাজে সফলতা অর্জন করতে হলে অবশ্যই পর্যাপ্ত ধৈর্য ধারণ করতে হয়। কারণ কোনো একটি কাজ শুরু করার সাথে সাথেই শতভাগ সফলতা আসবে এর কোনো গ্যারান্টি নেই। এজন্য কাজটি সঠিকভাবে শেষ করে ফলাফল অনুকূলে আসা পর্যন্ত ধৈর্য ধারণ করতে হবে। আপনি যে পণ্যটি বা বিষয় নিয়ে মার্কেটিং করছেন সেটি রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে উঠবে এটি অনেকটা অবাস্তব। তবে আপনার সঠিক কর্মপরিকল্পনা ও কাজের মাধ্যনে তা একসময় জনপ্রিয় হয়ে উঠবে এই বিশ্বাস ধারণ করতে হবে । আর এ জন্য সেই সময় পর্যন্ত লেগে থাকবে হবে ধৈর্যের সাথে।
একজন সফল ডিজিটাল মার্কেটার হতে হলে উপরের সবগুলো গুণ থাকা উচিত বলে আমি মনে করি।