প্রোগ্রামিং কমিউনিটি কিভাবে গড়ে তুলতে হবে তার ব্যাপারে কিছু গাইডলাইন

প্রোগ্রামিং কমিউনিটি এমন একটি প্লাটফর্ম যেখানে প্রোগ্রামাররা একত্রিত হয়ে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বিনিময় করে, একে অপরকে সাহায্য করে, নতুন নতুন সব প্রযুক্তি ও ট্রেন্ড নিয়ে আলোচনা করে, ক্যারিয়ার ও নেটওয়ার্কিংয়ের সুযোগ করে দেয়।

উদাহরণস্বরূপ অনলাইনের কিছু জনপ্রিয় প্রোগ্রামিং রিলেটেড কমিউনিটি হলো গিটহাব, স্ট্যাকঅভারফ্লো, ডেভটু, ফ্রিকোডক্যাম্প, রেডিট, মিডিয়াম ইত্যাদি। এগুলো ছাড়াও আরো অনেক কমিউনিটি আছে দেশে বিদেশে বিভিন্ন প্লাটফর্মের উপর। ফেসবুকে বিভিন্ন গ্রুপ ও পেইজের উপর ভিত্তি করেও কমিউনিটি গড়ে উঠতে পারে।

প্রোগ্রামিং কমিউনিটি অনেকগুলা সাব কমিউনিটিতে বিভক্ত। পিএইচপি, লারাভেল, জাভাস্ক্রিপ্ট, নেক্সটজেএস, পাইথন, গো সহ প্রতিটি ল্যাঙ্গুয়েজের আলাদা কমিউনিটি রয়েছে। সেগুলোতে বিভিন্ন প্যাটার্নে কাজ করা মানুষের আবার আলাদা গ্রুপ রয়েছে। বিভিন্ন মতবাদের উপর ভিত্তি করে আরো অনেকগুলো আলাদা কমিউনিটি তৈরি হয়েছে।

কমিউনিটিতে অংশ নিলে অভিজ্ঞ প্রোগ্রামারদের কাছ থেকে শেখা যায়, নতুন প্রযুক্তি, টুলস ও টেকনিক সম্পর্কে জানা যায়, সমস্যা সমাধানের দক্ষতা বাড়ে। এছাড়া নতুনদের শেখানোর জন্যও একটা ভাল প্লেস হতে পারে একটা কমিউনিটি। বিভিন্ন কোডিং সমস্যার সমাধানগুলো সাধারণত কমিউনিটি থেকেই আসে, যেখানে একসাথে বিভিন্ন প্রজেক্টে কাজ করা যায়, মোটিভেশন ও উৎসাহ পাওয়া যায়। নতুন আইডিয়া আর প্রজেক্ট শো কেইস করা থেকে শুরু করে অপেন সোর্সের কনট্রিবিউশনও কমিউনিটির অংশ। পজিটিভ দিক বিবেচনায় একটা কমিউনিটির অংশ হলে একজন মানুষ একাকী এগিয়ে যাওয়ার থেকে অনেক বেশি দ্রুত এগিয়ে যেতে পারে।

বাংলাদেশের প্রোগ্রামিং কমিউনিটিগুলো সাধারণত বিভিন্ন প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ আর কোর্স প্লাটফর্মের উপর ভিত্তি করে তৈরি। এছাড়া ব্যক্তিবিশেষে বিভিন্ন ইউটিউবার ও কন্ট্রিবিউটরের আশেপাশেও কমিউনিটি গড়ে উঠতে পারে। তবে উল্লেখযোগ্য একটা সংখ্যার মানুষ একই সাথে বিভিন্ন কমিউনিটির অংশ হয়ে থাকেন। এখানে বিভিন্ন কমিউনিটি থেকে সাধারণত বিভিন্ন ইভেন্ট আয়োজন করা হয়, যাতে অনলাইন ও অফলাইনে অনেকেই জয়েন করতে পারে। যথাযথ পরিপক্বতা ও মডারেশনের অভাবে এখানে বেশিরভাগ কমিউনিটিগুলো এখনো শক্তিশালী হয়ে না উঠার কারণে বিভিন্ন কোর্স প্লাটফর্মই কমিউনিটির স্পেসগুলো দখল করে নিয়েছে।

কমিউনিটিতে অংশ নিতে নিয়মিত প্রশ্ন ও উত্তর লেখা, বিভিন্ন প্রজেক্ট শেয়ার করা, মানুষ কি করতেসে সেগুলো রিভিউ করা, লেখালেখি করা, ভার্চুয়াল আর অফলাইনের বিভিন্ন ইভেন্টে অংশ নেয়ার কাজই বেশি করা হয়।

কমিউনিটিতে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বিষয়ে ক্যাচাল লেগে থাকে। এই ক্যাচালগুলো কমিউনিটিরই অংশ।

  • উদাহরণ স্বরূপ ২০২৩ সালে রেডিট তাদের এপিআই পেইড করার ঘোষণা দেয়ার কারণে অনেক এপ্লিকেশন বন্ধ হয়ে যায়, এবং প্রতিবাদস্বরূপ অনেকেই তাদের সাবরেডিট বন্ধ করে ডিসকর্ডে চলে যায়।
  • এআই নিয়েই প্রোগ্রামিং কমিউনিটি বিভক্ত হয়ে যায়। কেউ এটাকে ট্রেন্ড হিসাবে নিয়ে নেয়, কেউ এর কঠোর প্রতিবাদ করা শুরু করে। গিটহাব কোপাইলট আসার পর সেটা নিয়ে আলোচনা হয়, চ্যাটজিপিটি নিয়ে আলোচনা হয়, এভাবে প্রতিটা নতুন বিষয় নিয়ে আলোচনা সমালোচনার প্রেক্ষাপট তৈরি হয়।
  • ওয়ার্ডপ্রেস রিলেটেড কমিউনিটিতে ওয়ার্ডপ্রেস আর WP Engine নিয়ে একটা বিরাট সমস্যা তৈরি হয়। কর্পোরেট কোম্পানীগুলো অপেন সোর্স থেকে লাভ করা নিয়ে কিছু আলোচনা হয়। বিষয়টি মামলা পর্যন্ত গড়ায়।

একটা কমিউনিটিকে সুন্দর করে গড়ে তুলতে নতুনদেরকেই কয়েকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে ও স্টেপ নিতে হবে। বড়রা এখানে নতুনদেরকে বেড়ে উঠার মত পরিবেশ তৈরি করে দিতে হবে।

  • কমিউনিটিতে যারা আছে তাদের সাথে সৌজন্যমূলক ভাল আচরণ করতে হবে। নতুন কেউ এলে তার পরিচয়, জানা, কি নিয়ে কাজ করে, কি শিখতে চায়, এগুলো নিয়ে আলোচনা করতে হবে। কারো সাথে খারাপ আচরণ করা যাবে না। একজন নতুন হিসাবে একজনকে ওয়েলকাম করতে হবে।
  • নিয়মিত বিভিন্ন টিপস এবং ট্রিক্স শেয়ার করতে হবে, সাপ্তাহিক ও মাসিক বিভিন্ন সেশনের আয়োজন করতে পারলে সবচেয়ে ভাল। বিভিন্ন প্রোগ্রামিং ও সমসাময়িক বিষয় নিয়ে সমস্যা ও সমাধানের ব্যবস্থা করতে হবে।
  • ছোট ছোট হ্যাকাথন ও গেইমসের আয়োজন করা যায়। প্রয়োজনমাফিক বিভিন্ন কোডিং ওয়ার্কশপ ও কনটেস্টের আয়োজন করা যায় ব্যক্তিপর্যায় থেকেই। এখানে বিরাট বড় করেই কিছু করতে হবে এমন কোন কথা নাই।
  • কারো ভুল হলে হেসে উড়িয়ে না দিয়ে সম্মানের সাথে কথা বলতে হবে। ভিন্ন মতামত পেলেই ঝাপিয়ে পড়া যাবে না, বরং তাকে বোঝাতে হবে। নতুন হউক বা পুরাতন তাকে সম্মান দিতে হবে। কেউ বড় বা ছোট হলেই নিজের বাহাদুরি প্রদর্শন করা যাবে না।
  • বিভিন্ন কফি মিটাপ ও পিকনিক বা পার্টি আয়োজন করা যায়। এগুলোর মাধ্যমে কমিউনিটির সৌন্দর্য আরো বেড়ে উঠে, নিজেদের মধ্যকার মনোমালিন্য দূর হয়।

যেহেতু বাংলাদেশে কমিউনিটিগুলো পরিপক্ক হতে পারেনি, তাই নতুন একটা কমিউনিটির বিভিন্ন ঝামেলা, স্ক্যামার ও সমস্যা প্রতিরোধে সবারই কিছু কাজ করা প্রয়োজন। একার প্রচেষ্টায় একটা কমিউনিটি সুন্দর হতে পারে না।

  • কমিউনিটির সিনিয়রদের সহায়তায় বিভিন্ন গাইডলাইন পাবলিশ করতে হবে। এবং কিছু রুলস সেট করতে হবে। নির্দিষ্ট রুলস ভঙ্গ করলে কমিউনিটির পক্ষ থেকে বিষয়টির ব্যবস্থা নিতে হবে।
  • সন্দেহজনক কিংবা ক্ষতিকর যেকোন বিষয়ে শক্ত হাতে মডারেশন করতে হবে। কেউ যেন কারো উপর দলীয়ভাবে আক্রমন না করতে পারে সেক্ষেত্রে ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে।
  • প্রচুর পরিমাণে কনটেন্ট তৈরি করতে হবে যেন ভালো কনটেন্টের ভীরে খারাপ কনটেন্ট হারিয়ে যায়। এক্ষেত্রে নিজ স্বার্থ নিয়ে বা স্বার্থ ত্যাগ করে যেভাবেই হউক কমিউনিটি গড়ে তোলায় কাজ করতে হবে।
  • বিভিন্ন টিম ও কমিউনিটির মধ্যে পার্টনারশীপ গড়ে তুলতে হবে। নিজেদের বিষয়গুলো সম্পর্কে জানাতে হবে।

বর্তমানে যাই হউক, একজন প্রোগ্রামারের লাইফে কমিউনিটির অবদান অস্বীকার করা যায় না। হউক সেটা ইন্টারন্যাশনাল কমিউনিটি বা বাংলাদেশী কমিউনিটি। একজন মানুষ একটা সমাজে একা বাস করতে পারে না। এখন কমিউনিটিকে বাসযোগ্য করতে হলে নিজেরাই এগিয়ে আসতে হবে, অন্য কেউ এগিয়ে এসে এটা করে দিবে না।

রাসেল ভাইয়ের ওয়াল থেকে নেয়া একটা মিম শেয়ার না করলেই না। :point_down:

5 Likes

ভাইয়া অনেক সুন্দর ভাবে বুঝিয়েছেন।

1 Like