ড্রপআউট আর নন সিএসই হিসাবে ঠিক কতটুকু এগুনো যায় এটা যারা আমার মত ড্রপ দিয়েছে তারা ভালো বলতে পারবে। বিশেষ করে বাংলাদেশের কোন ভার্সিটি থেকে ড্রপ দেয়া আর সেরা হাভার্ড বা অক্সফোর্ড থেকে ড্রপ দেয়া সম্পূর্ণ আলাদা ব্যাপার।
পদে পদে কথা শুনতে হবে। এমন না যে ভার্সিটিতে পড়লে কথা কম শুনবেন। পড়লে আরো বেশি কথা শুনবেন জীবন থেকে এতগুলা বছরও ফাও নষ্ট হবার পর কথা শুনতে কারোই ভালো লাগবে না।
ড্রপ দিলে সবচেয়ে বেশি কথা শুনবেন এমন পরিবার ও আত্মীয় থেকে, যারা আপনাকে ভার্সিটিতে পড়তে হয়তো বিন্দুমাত্র সাহায্য করবে না তবে ভালো চাকরি পেলে মিষ্টি খেতে আসবে।
কেন ভার্সিটিতে পড়বেন?
ভার্সিটি পড়ার অর্থনৈতিক ও পারিপার্শ্বিক সুযোগ থাকলে, ভার্সিটিতে পড়া উচিত। হউক সেটা সিএসই বা নন-সিএসই। কিন্তু পড়াটা হতে হবে পড়ার জন্য। সিলেবাস যা খুশি তাই হউক, সময়টা কাজে লাগাতে হবে। চার বছরে একটা বিষয় নিয়ে পড়ার পরে, এত টাকা খরচের পর আপনার কিছুই না জানা থাকলে তাহলে যে ভার্সিটিতে পড়ে নাই সে এগিয়ে যাবেই।
ভার্সিটিতে যারা সার্টিফিকেট এর জন্য পড়তে চান, বিদেশ যাওয়ার জন্য বা অন্য কোন কারনে। যে সার্টিফিকেট থাকলে স্যালারি বেশি বা স্যালারি কম, আসলে আপনার স্কিল না থাকলে আসলেই সার্টিফিকেট অতটা ম্যাটার করবেই না। আগে স্কিল, আগে পড়াশোনা, আগে আপনার জ্ঞান, পরে হলো আপনার এইসবের প্রমাণ হিসাবে সার্টিফিকেট।
সার্টিফিকেট এর মান কমে যাওয়ার একটাই মূল কারণ, আপনার শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গেসে। এখান থেকে পাশ করে ইন্টারভিউ বোর্ডে গেলে কোম্পানি দেখে আপনার তুলনায় অন্য কারো স্কিল বেশি, তাকে হায়ার করে নেয়। কারন দিন শেষে কোম্পানি সার্ভাইব করতে হবে। আপনার শিক্ষাব্যবস্থার উপর ক্ষোভ কোম্পানির উপর ঝেড়ে লাভ নাই। একপক্ষের দোষ অন্যপক্ষকে দিয়ে কোন লাভ নাই।
সার্টিফিকেট অবশ্যই দরকার হবে যদি বাইরের ভিসা বা পাসপোর্ট নিতে চান। স্কুল বা কলেজের সার্টিফিকেট অন্তত লাগবেই। কারণ স্কুল লেভেলে অন্তত যা শেখায় কিছু হলেও শেখায়। যদিও এখন অই অংশও সম্ভবত ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। হাতে গোনা কয়েকজন বাদে সবাই মেন্টাল প্রেশারে থাকে, প্রচুর স্টুডেন্ট খারাপ পথে চলে যাচ্ছে।
ভার্সিটিতে না পড়তে পারলে কি করবেন?
আচ্ছা তো ড্রপ দিলে কি করবেন? যদি আর্থিক বা এমন অন্য কোন কারনে বাধ্য হয়ে ড্রপ দেন, তাহলে কন্টিনিউ করুন, আর নাহলে ভাই কেন ড্রপ দিসেন আপনিই জানেন।
প্রথমে কম্পিউটার বেসিক শিখবেন আর ইংরেজি শিখবেন। অনলাইনে টিউটোরিয়াল আর ডকুমেন্টস বোঝার জন্য ইংরেজি গুরুত্বপূর্ণ, আমার প্রচুর সময় নষ্ট হয়েছে এই স্টেপগুলার কারনে। কিভাবে শিখবেন নিজে নিজে বের করেন।
কম্পিউটার এর খুটিনাটি বিষয় জানুন। কিভাবে কি কাজ করে না করে এইসব জানুন। নেটওয়ার্ক ক্যাবল বলেন, আর হার্ডডিস্ক বলেন, বেসিক সব ধারনা নিয়ে নিন। নিজে নিজে কেসিং খুলে আবার পুরা জিনিস এসেম্বলি করতে পারলে ভালো। কোন হার্ডওয়্যার এ কি হয়, কোনটা সফটওয়্যার এ কিভাবে এপ্রচ করে, ডাটা ব্যাকাপ নেয়া ইত্যাদি শিখেন। ওয়ার্ড এক্সেল পাওয়ারপয়েন্ট এইসব জিনিস হাতের নাগালে নিয়ে ফেলেন।
প্রোগ্রামিং ধরে ফেলুন। একদম বেসিক লেভেলে প্রোগ্রামিং কি জিনিস, কিভাবে কাজ করে, এইসব দেখুন। ক খ গ এর মত সিন্ট্যাক্স দেখে প্র্যাকটিস করুন। মুখস্থ হউক না হউক, পাগলের মত করতে থাকুন আর করতেই থাকুন। মনে থাকুক না থাকুক। কেউ বলবে সি দিয়ে শুরু করতে, কেউবা গো দিয়ে, কেউ পাইথন, কেউ জাভাস্ক্রিপ্ট দিয়ে।
আমার মতে শুরুতে কি দিয়ে কি করেছেন অত ম্যাটার করে না। অবজেক্ট কি, লুপ কিভাবে কাজ করে এইসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বুঝার জন্য যেকোন ল্যাংগুয়েজ নিলেই হয়। তবে সি দিয়ে শুরু করলে একরকম উপকার, পাইথন দিয়ে করলে অন্য রকম। কিন্তু আমি বলব এত ডিবেটে গেলে শুধু শুধু কনফিউজড হবেন। কোনটা ভালো কোনটা খারাপ এগুলা ডিবেট করা ও ডিবেট শোনার সময় আপনার এখনো হয়নি, আরো দুই বছর পর এইসব করবেন।
আচ্ছা প্রোগ্রামিং এর বেসিক শেখার পর দুই চারটা ছোট প্রজেক্ট করে ফেলুন। নিজে নিজে করুন বা অন্য কারো মাধ্যমে করুন। একই সাথে দুই চারটা প্রোগ্রামিং প্রবলেম সলভ করুন। হ্যাকারর্যাংক বলেন বা লিটকোড, হইলেই হইলো। করতে গেলে বুঝবেন আপনার প্রচুর গ্যাপ আছে।
এবার গ্যাপ ফিলাপ করতে ডাটা স্ট্রাকচার, এলগোরিদম, ডিজাইন প্যাটার্ন, সিস্টেম ডিজাইন এইসব হাবিজাবি শেখা শুরু করুন। এগুলা শিখতে সবচেয়ে বেশি সময় লাগবে। এই স্টেজে এসে আপনি বিভিন্ন কোর্সে জয়েন করতে পারেন, বা দামি বই কিনতে পারেন। ফ্রি পেইড অনেক রকম কোর্স আছে।
কোর্স করেই চাকরিতে না ঝাপিয়ে দুই চারটা প্রজেক্ট করুন। যা শিখেছেন আজ পর্যন্ত সেগুলো দিয়ে অপেন ক্লোজড ফ্রি পেইড, যেখানে পারেন কন্ট্রিবিউট করার চেষ্টা করেন। দেখবেন সফট স্কিলও লাগে। কমিউনিকেশন, টিমওয়ার্ক, সিভি, সহ সফট স্কিলের জন্য যা করা লাগে করুন। ইন্টার্ন করুন অথবা কাউকে টাকা দিয়ে কোর্স করুন বা যাই হউক, এখানে আপনার সফট স্কিল বাড়াতেই হবে। একই সাথে প্রবলেম সলভ করতে থাকুন।
ক্যারিয়ারের শুরুতে কি করবেন?
জয়েনের পূর্বেঃ
এবার আসল ইন্টার্ন ও জুনিয়র পদে যাওয়ার জন্য আপনি প্রস্তুত। যেহেতু নিজে নিজে অনেক কিছু শিখেছেন, বা এত দূর এগিয়ে গিয়েছেন, তাই কোথাও জয়েন করতে গেলে যা লাগে আপনার তা থাকা উচিত এবং না থাকলে তা থাকানো উচিত। দেশি বিদেশি রিমোট লোকাল ফ্রিল্যান্স সহ যেভাবে পারেন এখানে আপনার টার্গেট হতে হবে বাস্তবে প্রজেক্ট করা ও অন্তত এক বছর টাকার ফ্লো হাতে আনা।
জয়েনের এক বছর পরঃ
এবার থামুন। এতদিনে আপনি মোটামুটি দেড় দুই বছর সময় পার করে ফেলেছেন। ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কে হালকা হলেও জ্ঞান আছে। কিছুই নতুন না। এখন আপনি আপনার স্কিল আরেক লেভেলে আপগ্রেড করার জন্য রেডি। আর্থিক সমস্যায় ভার্সিটিতে ভর্তি হতে না পারলে সান্ধ্যকালীন কোন কোর্সে ভর্তি হতে পারেন, অথবা অনলাইনে কোন ভালো ভার্সিটিতে ভর্তি হতে পারেন, অথবা ভালো হাই লেভেলের কোন সার্টিফিকেট কোর্সে ভর্তি হতে পারেন। এখন টাকার ভয় নাই, কিন্তু হয়তো ভাববেন আপনার সময়ও নাই, কিন্তু ক্যারিয়ারের এই শুরুর দিকে আপনার সময় বের করে নিতেই হবে। আর মনে রাখবেন ভার্সিটিতে চার বছরে অনেক রকম টপিক শেখানো হয়, আপনি কিন্তু ওগুলা কিছুই শিখেন নাই। আপনার যদি শেখার নেশা তৈরি হয়, তাহলে আগে ওগুলা শিখে ফেলতে পারেন।
কিন্তু যদি সেটা না করতে চান কোন সমস্যা নাই। আপনার লাইফে যেটা চেয়েছেন, সেটা অন্তত কিছুটা হলেও পেয়ে গেছেন। ড্রপ দিয়ে এতটুকু করতে পারা চারটিখানি কথা না।
কিন্তু আবারও এটা ভুলে গেলে চলবে না যে আপনার ক্যারিয়ার মাত্র শুরু। এক বছর শিখেছেন, এক বছর কাজে লাগিয়েছেন। বাকিটা যদি বুদ্ধি করে প্ল্যান না করতে পারেন আর বছরগুলা কি করবেন কে জানে!
যাক, শুরুটা একবার হয়ে যাবার পর অন্তত এটা ত মাথায় আসবে না যে ভাই কিভাবে শুরু করবো বুঝতেসি না।
ওহ আরেকটা বিষয় বলতেই ভুলে গেসি। সব গাইড সবার জন্য পারফেক্ট না। তাই কোথাও এডজাস্ট করার প্রয়োজন হলে এডজাস্ট করে নিবেন।
দেখুন টপিকটা আরো আলোচনার বিষয়, লাইফের সব গাইড এক পোস্টে দেয়া সম্ভব না। তবুও আপনাদের জন্য কয়েকটা গুরুত্বপূর্ণ রিসোর্সঃ
- CS50
- Roadmap.sh
- FreeCodeCamp