নিজের শেখার জার্নি দিয়েই শুরু করি, যখন প্রথম আমি এসইও এর কাজ শিখি ২০১০ সালে তখন এখনকার সময়ের মতো এতো ভালো রিসোর্স এ্যাভেইলেবল ছিল না। ইন্টারনেট এর স্পিড ছিল ১২৮ কেবিপিস। একটা নাটক এর পর্ব নামত ২-৩ ঘন্টায়। আর ইউটিউব তার কথা বাদই দিলাম তা থেকে শেখার মতো স্পিড বা রিসোর্স কোনটাই ছিল না ঠিক মতো। আমাদের শিখতে হতো সার্চ করে। গুগল এ সার্চ করতাম আর ভালো কোন সাইট পেলে তা থেকে শিখতাম। সেই ১২৮ কেবিপিএস এর লাইন থেকেও কষ্ট করে শিখতে হয়েছে। আর এখন ১২৮ কেবিপিএস এর লাইন হয়েছে ৫০ এমবিপিএস। চারদিকে শুধু রিসোর্স আর রিসোর্স, তাহলে ত এখন শেখার বাধা থাকার কথা না। আদতে তাই মনে হলেও আসলে তখনকার থেকে এখন শেখার বাধা অনেক বেশি।
বিশ্বাস হচ্ছে না, আসুন একটু তুলনা করে দেখি, কেন তখনকার থেকে এখন শেখার বাধা বেশি।
কেন বাধা বেশি?
শুরুতেই বলব, অনেক বেশি রিসোর্স এর কারণে। বেশি রিসোর্স থাকলে আপনি শিখতে বেশি পারবেন এই ধারণা টা ভুল। কারন, বেশি রিসোর্স আপনাকে অনেক বেশি ডিস্ট্রাক্ট করে ফেলবে। আপনি যতবেশি রিসোর্স পাবেন তত বেশি মন চাইবে, গুরু ১ এর টিউটোরিয়াল টা কেমন, এর ২ টা ভিডিও শেষ করার আগেই মনে চাইবে তাইলে গুরু ২ এর টা কি এর থেকে বেটার কিনা। এখন আপনার সরল মন দুই জায়গায় দুইভাবে দেখে মনে করবেন কার টা ঠিক। এখন আপনার সাথে ১ বা ২ কারো পরিচয় নাই যে আপনি কনফিউসন টা ঠিক ঠাক করে নেবেন। ফলে আপনার জাজমেন্টাল মন কাউকেই আর মন থেকে একসেপ্ট করতে পারবে না। ফলাফল আপনি পিছিয়ে পড়লেন। আসলে গুরুরা আপনাকে শেখাবে যতটুকু তার থেকে বেশি শেখার মাইন্ডসেট তৈরী করে দেবে। কিন্তু আপনি যদি এইটাই না শিখতে পারেন তাহলে বারবার পিছায়ে পড়বেন।
তাহলে এখন কি বলবেন? অধিক রিসোর্স থাকার ফলে আপনার শেখার ইতি ঘটে গেল না। ঠিক এই কারণেই আমি রউফ ৬ বছর ট্রাই করে ডেভেলপার হতে পারি নাই।
এরপরের কারণ হিসাবে বলতে পারেন, আমার টেকনোলজী। আজ যা করছি তা তো টেকনোলজীর অবদান, তাহলে কিভাবে আমাদের টেকনোলজী আমাদের পিছায়ে দিচ্ছে?
টেকনোলজী কিভাবে আমাদের পিছায়ে দিচ্ছে?
আগে যখন আপনি বা আমি শিখতে যেতাম মন দিয়ে শিখতে শুরু করতাম। থাকত না ফোনের টুংটাং বা ফেসবুকে ঢু মারার ইচ্ছা। এখন শিখতে শিখতে, একটু বোর হলেই যাই ফেসবুকে একটু ঢু মেরে আসি,আর একটু করতে যেয়ে ইনফিনিটি স্ক্রল এর পাল্লাতে পড়ে কখন আমাদের ২-৩ ঘন্টা পার হয়ে যায় তা আপনি বুঝতেই পারবেন না। হলো তো, টেকনোলজী আমাদের কিভাবে পিছায়ে দিলো।
এর সাথে আপনি যেখানেই যাবেন, সেইখানেই আপনার মনস্থির করার যায়গা নাই। কিছু না কিছু আপনাকে ডিস্ট্রাক্ট করার জণ্যে বসেই আছে। এখন এভারেজ এ একটা মানুষ একটা টপিকে ৩০ সেকেন্ড এর বেশি মনোযোগ দিতে পারে না। এইটাও কিন্তু টেকনোলজীর অবদান।
শেখার বাধা আমি আর আপনিওঃ
বিশ্বাস করেন আর নাই করেন, আমার আপনার শেখার মাঝে প্রধান অন্তরায় আর কেউ না, অনলি আমি বা আপনি নিজেই। আমি যখন শেখা শুরু করি, আমি বা আপনি কেউ অটুট বিশ্বাস নিয়ে শিখতে পারি না। পারি না এই সংকল্প করতে যে, আমি আজকে এই সাবজেক্ট না শেখা পর্যন্ত আজ ভাত খাবো না। আজ এইটা শেষ না করা পর্যন্ত আমি বাহিরে যাব না, রুম থেকে বাহির হবো না।
আপনার আর আমার মাঝে এই বিশ্বাস নাই যে আমাকে দ্বারা হবে, আমি পারব। আমি যদি না পারি কেউ পারবে না। আমরা এখন যা শিখব তা হলো প্রফেশনাল্ কোর্স বা স্কিল। নিজে নিজেকে তাগিদ দেবার অবস্থায় না গেলে শেখা শুরু করাই উচিত না। তাই আমাদের মাইন্ড সেট ঠিক করতে হবে শুরুতেই। এইটা পারিনা বলেই, আমার আপনার শেখার মাঝের বাধা হয়ে উঠি নিজেই।
আরো অনেক সমস্যা আছে, যা আমাদের শেখার পথের অন্তরায় হয়ে উঠতে পারে, সেই সকল বিষয়ে আপনাদের উতসাহ পেলে লিখবো। লিখবো কিনা আপনারি আমাকে রিপ্লাই তে জানাবেন।
তাহলে প্রশ্ন করতেই পারি কিভাবে এই সকল সমস্যা সমাধান করতেঃ
মুশকিল আসান এর মন্ত্রঃ
আসুন কিছু মন্ত্র শিখি যা আমাদের এই সকল সমস্যা থেকে বাহির হতে সাহায্য করবে আর আমাদের শেখার পথকে মসৃন করে তুলবে।
- শেখা শুরুর আগেই প্রায়োরিটি সেট করে নেন। আপনি কি শিখতে চান, একসাথে ভাত, ডাল, তরকারী রান্না করতে গেলে কিছুই হবে না। শেষে খিচুড়ীও হবে না।
- আপনার হাতে যদি অনেক গুলো কোর্স থাকে তাহলে এর মাঝে যাচাই করে নিন কোন কোর্স টা আপনি আগে শিখবেন। প্রয়োজন হলে আশেপাশের ভাই ব্রাদার দের হেল্প নিতে পারেন, বাছাই এর ক্ষেত্রে।
- একবার শুরু করলে, শেখার মাঝে রেগুলার হন। রেগুলার না শিখলে ভালো করতে পারবেন না। দুনিয়া উলটে গেলেও শেখা ছাড়বেন না, এমন শপথ নিয়ে মাঠে নামবেন।
- শেখার মাঝে জাজমেন্টাল হবেন না। যত ফালতু কোর্স হোক, পুরাটা দেখুন। এক হরফ হলেও শিখতে পারবেন।
- শেখার সাথে সাথে প্রাকটিস করুন। বেশি ভালো হয় আপনার মত একজন কে সঙ্গী করে নিন। একসাথে শিখুন, প্রতিযোগিতা করেন।
- নিজের উপরে বিশ্বাস রাখুন, আপনি পারবেন। আমি রউফ এর মগজ ও ১৪০০ গ্রাম আর আপনার টাও সেম।
- নিজেকে রিওয়ার্ড দেন। যখন একটা লেসন ঠিকঠাক শিখে ফেলবেন তখন নিজেকে একটা চকোলেট হলেও দেন। এতে করে আপনার ফোকাস ঠিক থাকবে।
- অতি আত্মবিশ্বাসী হবে না, এইটা আপনার শেখার জার্নীকে স্লো করবে বা শেষ করে দেবে।
- ছোট ছোট মাইলস্টোন এ কাজ গুলো কে ভাগ করে নেন। ছোট ছোট ভাগে শিখে ফেলুন।
আরো অনেক কিছুই লিখতে পারতাম কিন্তু অনেক দিন না লেখার ফলে হাত ব্যাথা করতেছে। আপনাদের যদি লেখা ভালোলাগে তাহলে আবার অল্প অল্প করে লিখতেই পারি। আমি লিখবো না লিখবো না পুরাটাই আপনাদের হাতে। আপনাদের সামান্য উপকার আমার বড় রিওয়ার্ড। কাজের বিনিময়ে রিওয়ার্ড না পেলে আমি লিখবো কেন তাইনা!
ভালো লাগলে আমার লেখা টা শেয়ার করতে পারেন, তবে ক্রেডিট দিয়েন ভাই। এআই এর যুগে এতো খানি এক বসাতে লিখা তাও ৮ বছর পরে! আসল কথা রাসেল ভাই ভালা না। আমাকে আবার লিখতে উতসাহিত করতেছে। আমার কি কন্টিনিউ করা উচিত?